আজ উপনির্বাচন ময়নাগুড়ি ও কুমারগ্রামে

বিধায়কেরা দল বদলালেন কেন, বোঝাতেই গেল সময়

দুই প্রাক্তন বিধায়ক আগের দল ছাড়লেন কেন, জনতাকে বোঝাতেই অনেকটা সময় চলে গেল তাঁদের এখনকার দলের লোকেদের। এক জন কুমারগ্রামের দশরথ তিরকে, অন্য জন ময়নাগুড়ির অনন্তদেব অধিকারী। সাম্প্রতিক রাজ্যসভা ভোটে দু’জনেই তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেন। পরে দলবিরোধী কাজের জেরে বহিষ্কৃত হওয়ার আগেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। দলও পাল্টে ভেড়েন তৃণমূল-শিবিরে।

Advertisement

অনির্বাণ রায় ও নিলয় দাস

জলপাইগুড়ি ও ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪১
Share:

দুই প্রাক্তন বিধায়ক আগের দল ছাড়লেন কেন, জনতাকে বোঝাতেই অনেকটা সময় চলে গেল তাঁদের এখনকার দলের লোকেদের। এক জন কুমারগ্রামের দশরথ তিরকে, অন্য জন ময়নাগুড়ির অনন্তদেব অধিকারী। সাম্প্রতিক রাজ্যসভা ভোটে দু’জনেই তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেন। পরে দলবিরোধী কাজের জেরে বহিষ্কৃত হওয়ার আগেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। দলও পাল্টে ভেড়েন তৃণমূল-শিবিরে। কিন্তু ওই দুই আসনে উপনির্বাচনের প্রচারে নেমে প্রাক্তন বিধায়কদের দল ছাড়ার প্রশ্নে ওঠা নানা অভিযোগের জবাব তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

Advertisement

দুই উপ-নির্বাচনেই ভোট আজ, বৃহস্পতিবার। প্রাক্তন বিধায়ক অনন্তদেববাবু এ বার ময়নাগুড়ি উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী। দশরথবাবু প্রার্থী আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে। তাঁর দলবদল এবং ইস্তফার জেরে কুমারগ্রাম বিধানসসভায় উপ-নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী জোয়াকিম বাক্সলা, একদা দশরথেরই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা উপ-নির্বাচনেও যেন দশরথবাবুকে লড়তে হচ্ছে। দল সূত্রের খবর, কুমারগ্রামে তৃণমূলের প্রার্থী না জিতলে, দায় আসতে পারে তাঁর ঘাড়েই। আর সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে দলের সাফল্যের পরেও ময়নাগুড়িতে ‘অঘটন’ ঘটলে প্রশ্ন উঠবে অনন্তদেববাবুর সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে। এই মুহূর্তে তাঁরা যে রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে রয়েছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে তা স্বীকার করেছেন দুই প্রাক্তন বাম বিধায়কই।

মুখে অবশ্য অনন্তদেববাবু বলেছেন, “দলের কর্মী-নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। উন্নয়নের জন্য দল ছেড়ে দিদির দলে যোগ দিয়েছি। আমরাই জিতব।” দশরথবাবুও বলেন, “অনেকেই জানতে চাইছেন, কেন তৃণমূলে এলাম। আসলে আগের দলে থেকে উন্নয়নের কাজ করতে পারছিলাম না। না জানিয়ে দলবদল করায় অনেকের অভিমানও রয়েছে। অনেকের সঙ্গে বসেই ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। এই মুহূর্তে সম্ভব না হলেও, ভোট-পর্ব মিটলে অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”

Advertisement

ময়নাগুড়ির আরএসপি প্রার্থী দীনবন্ধু রায় অবশ্য বলছেন, “অনন্তদেববাবুকে আর কেউ বিশ্বাস করছে না। উনি এত সহজে দল বদলের ব্যাখ্যাও দিয়ে উঠতে পারবেন না।” প্রায় একই যুক্তি কংগ্রেস প্রার্থী পুরঞ্জন সরকারের।

কুমারগ্রাম বিধানসভার ১৯টির মধ্যে ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। চা বাগানেও দলীয় সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে দাবি করে উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জোয়াকিম বাক্সলার প্রত্যয়, “কোনও চিন্তা নেই।” তবে উল্টো ব্যাখ্যাও আছে। প্রাক্তন বাম-বিধায়কের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ তাঁর জেতার রাস্তা সহজ করবে বলে বিশ্বাস আরএসপি প্রার্থী মনোজকুমার ওরাওঁয়ের। তিনি বলেন, “গতবারের থেকে ব্যবধান কত বাড়ানো যায়, সেটাই ভাবছি।” তাঁর যুক্তি, “জোয়াকিম আগে এই আসনে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ভোটে হেরেছেন। তা ছাড়া উনি এখানকার বাসিন্দাও নন।” কুমারগ্রামে কংগ্রেস প্রার্থী ক্লেমেন্ট ডুংডুং এবং বিজেপি প্রার্থী বিনোদ মিনজ আবার নিজ-নিজ যুক্তিতে আত্মবিশ্বাসী।

কুমারগ্রাম বিধানসভার ১২টি চা বাগানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রভাবও রয়েছে। লোকসভা ভোটে মোর্চা সমর্থন করছে বিজেপিকে এবং পরিষদ তৃণমূলকে। তাই ভোট ভাগাভাগিতে, কার ঘরে কত ভোট ঢুকবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

পরিসংখ্যান নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ময়নাগুড়িতেও। গত ভোটে অধিকাংশ পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এসেছে, পঞ্চায়েত সমিতিও দখল করেছে রাজ্যের শাসক দল। তবে এ বারের উপনির্বাচনে কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) প্রার্থীকে সমর্থন করেছে বিজেপি। কেপিপি-বিজেপি জোটের দাবি, ময়নাগুড়িতে সব হিসেব ওলটপালট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারা।

(সহ প্রতিবেদন: রাজু সাহা, নারায়ণ দে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন