বাবাকে আঁকড়ে মা’কে খুঁজছে অঙ্কুর

হাসপাতালের বেডে শুয়ে বারেবারে মা-মা বলছে ৩ বছর বয়সী অঙ্কুর বর্মন। সেই শিশু, যার উপর দিয়ে দু-দুটি ট্রেন চলে গিয়েছে। দুটি লাইনের মাঝে মায়ের দেহ আঁকড়ে পড়েছিল শিশুটি। ফালাকাটা হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির মাথায় ও কপালে চোট রয়েছে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৫
Share:

ফালাকাটা হাসপাতালে অঙ্কুর। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে বারেবারে মা-মা বলছে ৩ বছর বয়সী অঙ্কুর বর্মন। সেই শিশু, যার উপর দিয়ে দু-দুটি ট্রেন চলে গিয়েছে। দুটি লাইনের মাঝে মায়ের দেহ আঁকড়ে পড়েছিল শিশুটি। ফালাকাটা হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির মাথায় ও কপালে চোট রয়েছে। একাধিক সেলাই ও ব্যান্ডেজ করাতে হয়। শুক্রবার সকালে খবর পেয়েই ছেলের কাছে ছুটে আসেন শিশুটির বাবা অরুণ বর্মন ও আত্মীয়রা। তবে বাবা ছাড়া অন্য কারও কাছে অঙ্কুর যেতে চায়নি। এমনকি বাবার কোলে উঠেই বারেবারে ডুকরে কেঁদে উঠেছে সে।

Advertisement

কান্নার ঘোরে অঙ্কুর শুধু বারকয়েক ‘মা’ বলে ডাকাডাকি করেছে। দিনভর সেভাবে সে কোনও কথাই বলেনি। খাওয়ানোর জন্য পরিবারের লোকেরা জোরাজুরি করলেও বারেবারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অঙ্কুর। পরিস্থিতির জেরে হাসপাতালের বেড থেকে কোলে তুলে অঙ্কুরকে একাধিকবার বাইরের বারান্দায় নিয়ে যায় তার বাবা। দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ভোলাতে নানা গল্পের চেষ্টা করেন তিনি। কিছুতেই হাসি ফোটেনি অঙ্কুরের। অরুণবাবু জানান, ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। সারাদিন প্রায় কথাই বলেনি। কাঁদতে কাঁদতে শুধু মা বলে ডেকেছে। মাত্র সেভাবে খাওয়া দাওয়া করেনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনে কাটা পড়ে অঙ্কুরের মা প্রণতিদেবীর মৃত্যু হয়। সে সময় অঙ্কুর মায়ের কাছেই ছিল। বরাত জোরে রেললাইনের ওপর পড়ে থাকা শিশুটি অবশ্য বেঁচে যায়। রাতেই ঘোকসাডাঙ্গা থানার ওসি বিশ্বাশ্রয় সরকার শিশুটির প্রাথমিক চিকিত্‌সার বন্দোবস্ত করেন। এমনকি কিছু ওষুধ ও ইনজেকশনের ব্যবস্থা তিনি ব্যক্তিগতভাবে করেন। এদিনও দিনভর ফালাকাটা হাসপাতালে মহিলা সিভিক ভলান্টেয়র রেখে শিশুটির খোঁজখবর নেন ওসি। হাসপাতালের চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও অঙ্কুরের বাড়তি যত্ন নেন। তবে শিশুটির মানসিক অবস্থায় সকলেই বিষণ্ণ। ঘোকসাডাঙ্গা থানার ওসি বিশ্বাশ্রয়বাবু বলেন, “এতবড় ধাক্কা এততুকু বাচ্চার পক্ষে সামলান বিরাট ব্যাপার। ও বেঁচে আছে এটাই বড়প্রাপ্তি। আশা করি, ও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।”

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার জেরে শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক হতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে। পরিবারের লোকেরাও তাই মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে অঙ্কুরের সামনে কোনও কথা বলছেন না। অঙ্কুরের মা মৃত প্রণতি দেবীর কাকা রবীন্দ্র বর্মন বলেন, “ছেলেটা দুটো ট্রেন লাইনের ওপর দিয়ে ছুটে যাওয়ার পরেও বেঁচে গিয়েছে। এটাই প্রাপ্তি। ওকে সুস্থ করাই আমাদের লক্ষ্য।” ফালাকাটার বিএমওএইচ সুমন ভদ্রের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “শিশুটির চিকিত্‌সা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন