ডাকাতির পর লন্ডভন্ড সোনার দোকান। —নিজস্ব চিত্র
বাঘ-সিংহের মুখোশ পরে বোমা-গুলি ছুড়ে ভরসন্ধ্যায় সোনার দোকান থেকে কয়েক কোটি টাকার গয়না লুঠ করে নিয়ে গেল ডাকাতেরা।
সোমবার সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরে গঙ্গারামপুর শহরের বড়বাজার এলাকার থানা থেকে মাত্র শ’তিনেক মিটার দূরে ডাকাতি করল ৪০-৪৫ জনের ডাকাত দলটি হানা দেয়। মিনিট বিশেক লুঠপাট চালিয়ে কার্যত বিনা বাধায় চলে যায় তারা। বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে জখম হন দোকানের এক কর্মচারী। ডাকাতদের বন্দুকের বাড়ি খেয়েছেন দোকানের বৃদ্ধ মালিক বসন্ত মুন্দ্রাও। দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “মোটরবাইক ও ছোট গাড়ি নিয়ে দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করতে এসেছিল। তারা পালানোর সময়ে গঙ্গারামপুর থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর গুলি ছুড়লে ওদের এক জন জখম হয়। তার সঙ্গীরাই তাকে মোটরবাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে খবর। দলটিকে খুঁজতে জেলা ছাড়াও মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” যদিও গভীর রাত পর্যন্ত কেউই ধরা পড়েনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভরসন্ধ্যায় আচমকা বোমা-গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল বাজার এলাকায়। অন্য সব দোকানে দ্রুত ঝাঁপ পড়ে যায়। হাটের লোকজনও প্রাণভয়ে দৌড়তে থাকেন। চারদিকে বোমার ধোঁয়া। তার মধ্যে গিয়েই গয়না ও নগদ টাকা নিয়ে ডাকাতদের একটি দল তপনের দিকে এবং অন্য দলটি গঙ্গারামপুরের বেলবাড়ি এলাকা দিয়ে পুণর্ভবা নদীর বাঁধের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ওই সময়ে বাজারের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল তৃণমূলের পরিষদীয় সচিব তথা বিধায়ক বিপ্লব মিত্রের লালবাতি লাগানো গাড়ি। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চালক একটি দোকানে ঢুকেছিলেন। দুষ্কৃতীরা ওই গাড়ি লক্ষ করেও অন্তত ৭-৮ রাউন্ড গুলি চালায়, একাধিক বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। দু’দিকের কাচ ভেঙে গাড়িটির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এ দিনের ঘটনায় রীতিমত হতভম্ভ শহরের ব্যবসায়ীরা। প্রাথমিক রেশ কাটতেই দলে-দলে সোনার দোকানের সামনে ভিড় করেন এলাকার মানুষজন। নিরাপত্তার দাবিতে সরব হন তাঁরা। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলা জুড়ে সোনার দোকান বন্ধ রাখার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে জেলা স্বর্ণকার সমিতি। থানার একেবারে কাছে এমন ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। বিপ্লববাবু অবশ্য বলেন, “যে ভাবে ছক কষে দলটি হামলা চালিয়েছে, তা অপ্রত্যাশিত। এমন ডাকাতি গঙ্গারামপুরে আগে হয়নি।”