বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা, নির্বাচন বাতিল করতে চান অধ্যক্ষ

বিরোধীদের মনোয়নপত্র বাতিল করলে তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে। গ্রহণ করলে পড়তে হবে টিএমসিপির কোপে। বুধবার দু’পক্ষই ছিল মারমুখী মেজাজে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচনই বাতিল করে দিলেন মালদহের পাকুয়াহাট কলেজের অধ্যক্ষ অতীন ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৫
Share:

বিরোধীদের মনোয়নপত্র বাতিল করলে তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে। গ্রহণ করলে পড়তে হবে টিএমসিপির কোপে। বুধবার দু’পক্ষই ছিল মারমুখী মেজাজে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচনই বাতিল করে দিলেন মালদহের পাকুয়াহাট কলেজের অধ্যক্ষ অতীন ভট্টাচার্য।

Advertisement

কলেজের এক পদস্থ কর্মী জানান, বুধবার সারা দিন ধরে মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে গোলমালের পরে রাতে অধ্যক্ষ কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানেই আলোচনা হয়, পরিস্থিতি এমনই যে, মনোনয়নপত্র নিয়ে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা কাটছে না। তারপরে সেই রাতেই অতীনবাবু গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাক্স করে জানিয়ে দেন, কলেজে নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি নেই।

বৃহস্পতিবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক অপূর্ব চক্রবতী জানান, “কলেজ কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট পাওয়ার পরে আপাতত নির্বাচন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলেজে ঠিক কী হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতেও বলা হয়েছে।” এই কলেজে ২৯ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা ছিল।

Advertisement

অতীনবাবুদের আশঙ্কা মতোই এ দিন সকাল থেকেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ চত্বর। বেলা ১১টা নাগাদ এই কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান এসএফআই এবং এবিভিপি কর্মীরা। তবে কলেজের মূল দরজায় ভোট স্থগিত রাখার নোটিস দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা। এ দিন কলেজ বন্ধও ছিল। এবিভিপির বামনগোলা ব্লক সম্পাদক অমিত ঘোষের অভিযোগ, “টিএমসিপির চাপে কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা পথে নামব।” একই দাবি করেছে এসএফআইও। এ দিন পাকুয়া স্ট্যান্ডে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কের উপরে ত্রিপল বিছিয়ে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখায় এবিভিপি এবং এসএফআই। এবিভিপি এবং এসএফআই সমর্থকেরা পুরো পাকুয়া এলাকায় মিছিল করেন। বৃহত্তর আন্দোলনে নামারও হুমকি দেন তাঁরা।

টিএমসিপির অবশ্য দাবি, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির জন্যই ভোট প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুভাষ বর্মণ বলেন, “অধ্যক্ষের গাফিলতির জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ হতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন, তাতে তিনি কী লেখেন, তা আমরা দেখছি।” সিপিএমের স্থানীয় বিধায়ক খগেন মুর্মু অবশ্য বলেন, “পরিচালন সমিতির সভাপতি ও অধ্যক্ষ চক্রান্ত করে কলেজে নির্বাচন বাতিল করেছেন।” অতীনবাবুর মোবাইল বন্ধ ছিল। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

বুধবার এই কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার সময় টিএমসিপি প্রথমে বিরোধীদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ। পরে বিরোধীদের জন্য আলাদা ঘরে মনোনয়নপত্র তোলার ব্যবস্থা করা হলে তাতেও তারা বাধা দেয় বলে দাবি এবিভিপি এবং এসএএফআইয়ের। বিরোধীরা

তখন অধ্যক্ষের ঘরে অবস্থান করতে শুরু করলে অতীনবাবু তাঁদের মনোনয়নপত্র দেন ও পুলিশি প্রহরায় কলেজ থেকে বেরোনোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে টিএমসিপি ঘেরাও করে অধ্যক্ষকে। অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাক্স করেন, বিরোধীদের যে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে তা বাতিল বলে গণ্য করা হোক। এর পরে ঘেরাও মুক্ত হন তাঁরা। তারপরে রাতেই ফের বৈঠক করেন অধ্যক্ষ। তখনই নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন