বৃষ্টি নেই, চাষে বড় ক্ষতির আশঙ্কা কোচবিহারে

একে তীব্র দাবদাহ। তার ওপর বৃষ্টির দেখা নেই। খালবিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ। ধুঁকছে নলকূপ। রবিবার এক পশলা বৃষ্টি হলেও বিস্তীর্ণ এলাকার জমির মাটি ফেটে চৌচির। জলের অভাবে বোরো ধান, পাট ও ভুট্টা খেত শুকিয়ে হলদে হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মাঠে পুড়ছে ঝিঙে, পটল, উচ্ছে, লঙ্কা, টোম্যাটোর মত হরেক সব্জি। বর্ষাতি লঙ্কা, বেগুনের মত সব্জির বীজতলা তৈরির কাজও কার্যত শিকেয়। বিপাকে কোচবিহারের চাষিরা। বৃষ্টির অভাবে জেলাজুড়ে ধান, পাট ও সব্জি চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৫
Share:

মুখ্য কৃষি আধিকারিকের দফতরে জেলা আলু-ধান-পাট চাষি সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভ।

একে তীব্র দাবদাহ। তার ওপর বৃষ্টির দেখা নেই। খালবিল, পুকুর শুকিয়ে কাঠ। ধুঁকছে নলকূপ। রবিবার এক পশলা বৃষ্টি হলেও বিস্তীর্ণ এলাকার জমির মাটি ফেটে চৌচির। জলের অভাবে বোরো ধান, পাট ও ভুট্টা খেত শুকিয়ে হলদে হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মাঠে পুড়ছে ঝিঙে, পটল, উচ্ছে, লঙ্কা, টোম্যাটোর মত হরেক সব্জি। বর্ষাতি লঙ্কা, বেগুনের মত সব্জির বীজতলা তৈরির কাজও কার্যত শিকেয়। বিপাকে কোচবিহারের চাষিরা। বৃষ্টির অভাবে জেলাজুড়ে ধান, পাট ও সব্জি চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

এ পরিস্থিতিতে জেলায় খরা ঘোষণা করার দাবি তুলেছে কোচবিহার জেলা আলু-ধান-পাট চাষি সংগ্রাম সমিতি। সোমবার কোচবিহারের জেলা শাসক ও মুখ্য কৃষি আধিকারিকের দফতরে স্মারকলিপি দেয় সমিতি। মুখ্য কৃষি আধিকারিক অসিত পাত্র বলেন, “দীর্ঘদিন পরে রবিবার মাত্র ৮ মিমির মত বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে সমস্যা মিটবে না।” তিনি জানান, তাপমাত্রা গড়ে ৩৫ ডিগ্রিতে ঘোরাঘুরি করছে। এমন অবস্থা টানা সপ্তাহ খানেক চললে সমস্যার আশঙ্কা থাকছেই। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। খরা ঘোষণার দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হচ্ছে।” উদ্যান পালন দফতরে কোচবিহারের সহকারী আধিকারিক দীপক সরকার জানান, বর্ষাতি লঙ্কা, বেগুনের বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থা আর কিছু দিন চললে মাঠের ঝিঙে, পটল, গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর জানিয়েছে, কোচবিহার জেলায় সেচ এলাকা সেভাবে বাড়েনি। গড়ে প্রায় তিরিশ শতাংশ জমিতে সেচের সুবিধে মিলছে। তাই পাট, ভুট্টা থেকে সব্জি চাষিদের বেশির ভাগই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। তবে বোরো ধান চাষিদের বেশির ভাগই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এবার প্রায় চার মাস বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। চড়া তাপমাত্রায় তুফানগঞ্জ, নাটাবাড়ি, চিলাখানা, টাপুরহাট, ঘুঘুমারি, দেওচড়াই, মাথাভাঙা, শীতলখুচি, মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা, বামনহাট, পুন্ডিবাড়ির মত বিস্তীর্ন এলাকায় ধান, পাট খেতের মাটি ফেটে গিয়েছে। এমন চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে। দফতরের কয়েক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে জেলায় ভারী বৃষ্টি নেই। গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১৫০ মিমি বৃষ্টি হলেও এ বার ১ জানিয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিমি। জেলা আলু-পাট-ধান চাষি সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক নৃপেন কার্জি বলেন, “উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দ্রুত খরা ঘোষণা না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

Advertisement


শুকনো আবাদি জমি।

কোচবিহার জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে মরসুমি সব্জি চাষ হয়েছে। চড়া রোদের পাশাপাশি বৃষ্টির অভাবে মাটির রস কমে যাওয়ায় খেত শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। তুফানগঞ্জ ১ পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি জগদীশ বর্মন বলেন, “প্রায় ৭ বিঘে জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। টানা বৃষ্টি না হওয়ায় জমির বহু গাছ শুকিয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে।” কোচবিহার সদরের শিমুলগুড়ির রতন বর্মন বলেন, “দুই বিঘেয় বোরো ধান করেছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করলেও টানা অনাবৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু অংশের গাছ লালচে হয়েছে। পোকার সংক্রমণও হচ্ছে।”

ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পাটেও। সুশীল রায়, অমর রায়ের মত পাট চাষিরা জানান, যা অবস্থা তাতে পাট গাছের চারা বাঁচিয়ে রাখাই মুশকিল। পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, “সেচের অবস্থা বাম আমলের তুলনায় অনেক ভাল। বহু শ্যালো, নলকূপ হয়েছে, পাম্প বিলি হয়েছে। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পেও প্রায় দুই হাজার পুকুর সংস্কার, খনন হয়েছে। না হলে এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দ্রুত এই পরিস্থিতি নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”

ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন