আটপৌরে জীবনযাত্রা যেন একদিনেই পাল্টে গিয়েছে রেণুকাদেবীর। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সেলফোনের রিং যেন থামছে না। দম নেওয়ার ফুরসত নেই তাঁর। অবিশ্বাসের ঘোর কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রেণুকা সিংহের চোখেমুখে। তিনি বলেছেন, “কখনও লোকসভা ভোটের প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবিনি। খবরটা যখন পেলাম, বিশ্বাসই করতে পারিনি। সেই অনুভূতি বলতে পারব না।” কোচবিহার পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারপার্সন রেণুকাদেবী জানান, দলনেত্রীর পরামর্শ মেনে দলের সবাইকে নিয়ে কোচবিহারের উন্নয়ন করার চেষ্টা করবেন।
কোচবিহারের শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড গুঞ্জবাড়িতে বাড়ি রেণুকাদেবীর। কাছেই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। তিন বছর আগে অবসর নিয়েছেন। দেওয়ানহাট জুনিয়র গার্লস স্কুলে অতিথি শিক্ষিকা হিসেবে কাজও করছেন। দুই ছেলে চাকরি সূত্রে বাইরে থাকেন। গুঞ্জবাড়ির এই বাড়িতে এখন থাকেন দু’জন। রেণুকাদেবী ও তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলদেব সিংহ।
তবে রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা নন রেণুকাদেবী। ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের টিকিটে ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়ে জয়ী হন। সেই সময়ই ভাইস চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পান। তবে তারপর রাজনীতিতে আর জড়াননি। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো জানিয়ে দিচ্ছেন, “প্রত্যাশার চাপ নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে।”
বুধবার পর্যন্ত রুটিনটা ছিল এরকম। সকালে ঘুম থেকে ওঠে রান্নাবাড়ি ১০টা বাজতেই স্কুলে যাওয়ার ব্যস্ততা। স্কুল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার রান্নাঘরে। এর মাঝেই স্বামীর দেখাশোনা এসবেরই সাক্ষী ছিল গুঞ্জবাড়ির ওই দোতলা বাড়ি। দুপুরে টেলিভিশনের পর্দায় রেণুকা সিংহের নাম তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হতেই ওলটপালট হয়ে গিয়েছে রুটিন। ভিড় বাড়তে থাকে বাড়িতে। প্রতিবেশীরা তো বটেই, আত্মীয়, দলের নেতা কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে অভিনন্দন জানান। ফুলের তোড়ায় ভরে যায় বাড়ি।
প্রার্থী হওয়ায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যে রাতে রান্নাঘরে ঢুকতেই পারেননি। তাঁর স্বামী বলদেববাবু জানান, রান্না করার ফুরসত মেলেনি রাতে। অনেক রাতে একটু আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে ঘুমিয়েছেন তাঁরা। বুধবার মানুষের ভিড় যেন দ্বিগুণ হয়েছে। বাড়ির সামনে তৃণমূলের পতাকা, ফেস্টুনে ভরে গিয়েছে। শ্রমিক তৃণমূলের নেতা প্রাণেশ ধর, পার্থ মল্লিক, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা গিয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন। ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলেছেন রেণুকা দেবী।
বামেদের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক রায় অবশ্য জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন। বিজেপির প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মনও উদয়াস্ত লোকসভা কেন্দ্র চষে বেড়াতে শুরু করেছেন। দীপকবাবু তাঁর সিতাইয়ের বাড়ি থেকে সকাল ৮ টায় বেরিয়ে পড়েন। ফেরেন রাত ১০ টায়। তিনি বলেন, “বাড়িতে যতটুকু সময় থাকি, তার মধ্যেই ভিড় করেন কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোচ্ছি।”