বামনহাট হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক ভুবনমোহন পাল। নিজস্ব চিত্র।
হাইস্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তাঁর ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বেঁধেছে। কোচবিহারের দিনহাটায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতিবার বিকেলে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ওই প্রধান শিক্ষককে অপহরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তাঁদের জামাই এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বামনহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভুবনমোহন পালের স্ত্রী মলিনা দেবী। অপহরণকারী মলিনা দেবীর অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৪ ঘন্টায় ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে বলেও অভিযোগ। শুক্রবার সন্ধে সাত’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসেন ভুবন বাবু। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ভুবনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” ভুবনবাবুর স্ত্রী মলিনা দেবী বলেন, “উনি ফিরে এসেছেন। আমরা খুশি। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাইনা।”
পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী মলিনা দেবী জানান, তাঁদের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল বাবুপাড়ার বাসিন্দা অভিযুক্ত গৌরব কর্মকারের। ২০০৭ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করে ওই যুবক। তা নিয়ে সংসারে অশান্তি চরমে ওঠে। ২০১১ সালে ভুবনবাবুর মেয়ে বাপের বাড়ি ফিরে যায়। তখন থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন। বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে একটি মামলাও চলছে। কিন্তু, ওই যুবক স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চায় না। ২০১১ সালের পর থেকে অভিযুক্ত ভুবনবাবুর পরিবারের উপর হামলা শুরু করেন। তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুরের পাশাপাশি একবার তাঁদের গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ তাঁদের।
মলিনা দেবী বলেন, “মেয়ে যাতে সুখে থাকে সে জন্য ৫ লক্ষের বেশি টাকা নানা সময় দিয়ে ওই যুবককে সাহায্য করেছি। একটি গাড়িও কিনে দিয়েছি। তার পরেও আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত মারধর করতে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করে মেয়ে। এখন আমাদের সম্পত্তি নেওয়াই ওঁর মূল লক্ষ্য।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় প্রতিদিন ফোন করে তাঁদের হুমকি দিত অভিযুক্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এদিনও নিজের বাইকে চেপে স্কুলে যান ভুবনবাবু। বিকাল চারটে নাগাদ বাড়ি ফেরার সময় স্কুল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শিমুলবাড়ি বাজারের কাছে একটি সাদা রঙের ছোট গাড়ি তাঁর পথ আটকায়॥
পুলিশ সূত্রের খবর, অপহরণের পর মলিনা দেবীও তাঁদের জামাই গৌরব কর্মকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। গৌরবের বাড়ি বাবুপাড়াতে। তাঁর বাবা কানু কর্মকারের ব্যবসা রয়েছে। তবে গৌরব নিজে কোনও কাজ করে না। সবসময় সে নেশা করে থাকে বলেও অভিযোগ করেছে ভুবন বাবুর পরিবার। বামনহাট হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক রানা ঘোষ বলেন, “প্রধান শিক্ষক কথা বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। তিনি একটু সুস্থ হলে পুরো বিষয়টি জানা যাবে।” তবে প্রধানশিক্ষক বাড়ি ফেরায় স্বস্তি ফিরেছে তাঁর পরিবার ও স্কুলের ছাত্র- শিক্ষক মহলে।