মালিকপক্ষ নবীকরণের আবেদন করলেও, লিজ বাতিল করে বন্ধ বান্দাপানি চা বাগানের জমি অধিগ্রহণ করল রাজ্য সরকার। আট বছর আগে বান্দাপানি চা বাগানের লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। শুক্রবার সকালে মাদারিহাটের বিডিও এবং ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বাগানে নিয়ে জমি অধিগ্রহণের নোটিশ টাঙিয়ে দেন। বাগানের জমি অধিগ্রহণ হলেও, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার কী হবে তা যেমন জানা যায়নি, তেমনই বাগান পরিচালনার ভার সরকারের হাতে থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া কোনও চা বাগানের জমির অধিগ্রহণ সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম বলে জানা গিয়েছে। যদিও,কেন বান্দাপানি বাগানের জমি অধিগ্রহণ করা হল তার কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে বাগানের পরিচালনা ব্যবস্থা কী হবে তাও জানেন না বলে আধিকারিকরা দাবি করেছেন। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “বান্দাপানি চা বাগানের লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাগানটির জমির দখল নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে বাগানের পরিচালনা নিয়ে কী পদক্ষেপ হবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
এ দিন সকালে সরকারি আধিকারিকরা বাগানে গিয়ে কারখানার বাইরে জমি অধিগ্রহণের (টেকেন ওভার) নোটিশ টাঙিয়ে দেন। ২০১১ সালের শেষে মালিকানা বদলের আগে ও পরে বেশ কয়েক দফায় বাগানটি বন্ধ ছিল। গত বছরের জুলাই মাসে বকেয়া সংক্রান্ত গোলমালের জেরে মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকেই বাগানটি বন্ধ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই চা বাগানের জমির লিজ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এ দিন জেলা প্রশাসনের তরফে বাগানের তিন হাজার একরের কিছু বেশি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করার কথা জানানো হয়।
রাজ্য সরকারের চা উন্নয়ন নিগমের হাতে দার্জিলিং এবং ডুয়ার্স মিলিয়ে পাঁচটি বাগানের মালিকানা রয়েছে। নিগম সূত্রের খবর, বর্তমানে নিগমের আর্থিক হাল তলানিতে ঠেকেছে। আর্থিক কারণেই এবার পুজোয় বোনাসের হারও প্রথমে অন্যান্য বাগানের থেকে কম ঘোষণা করা হয়েছিল। সে কারণেই অন্তত বারোশো শ্রমিক সহ নতুন একটি চা বাগানের দায়িত্ব হাতে নেওয়া নিগমের পক্ষে আদৌও সম্ভব কিনা সরকারি আধিকারিকদের মধ্যেই সে প্রশ্ন উঠেছে।
বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে বাবলু শ্রীবাস্তব বলেন, লিজ পুনর্নবীকরণের জন্য নিয়ম মেনে জেলাশাসকের দফতরে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। শুক্রবার জানতে পারলাম রাজ্য সরকার বাগানটির দখল নিয়েছে।এ দিকে সরকার জমি অধিগ্রহণ করায় বাগান খোলা নিয়েও আইনি জটিলতা তৈরির আশঙ্কা করছে বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। এনইউপিডাব্লুর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিক সংগঠনগুলিকে কিছু না জানিয়েই সরকার পদক্ষেপ করেছে। কী ভাবে বাগান খুলবে তাও জানি না।” আরএসপির চা শ্রমিক সংগঠন ডুয়ার্স চাবাগান ওয়ার্কাস ইউনিয়েনর সহ সভপতি নির্মল দাস দাবি করেন, “শুধু চা বাগনের দখল নিলে হবে না, বাগানটি চালু করে শ্রমিকদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্তমানে উত্তরবঙ্গে সরকারি ভাবে ৫টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে। সে বাগানগুলি নিয়েও পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা। তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারাণ সম্পাদক নকুল সোনার বলেন, “শ্রমিকদের পাওনা না মিটিয়েই মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যায়। বাগানটি সরকার অধিগ্রহন করায় শ্রমিকরা খুশি।” তবে এ দিন বকেয়া পাওনা বা বাগান খোলা নিয়ে নিয়ে নকুলবাবুও কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি।