বসতি বেড়েছে, রাস্তা সেই এক

রাজবাড়ির অলিন্দে দাঁড়িয়ে এক সময় যত দূর চোখ যেত, দেখা যেত জঙ্গলে ঘেরা সবুজের সমারোহ। এখন চোখ আটকে যায় কংক্রিটের জঙ্গলে। ১৯৫৭ সালে ব্লক, ১৯৭১ সালে থানা হয়েছে চাঁচলে। এখন যেখানে চাঁচল থানা, ব্লক, হাসপাতাল ও সেগুলিকে কেন্দ্র করে একেকটি পাড়া গড়ে উঠেছে, সেখানে বছর ষাটেক আগেও ছিল আমবাগান। এক হাজারটি আমগাছ ছিল বলে ওই এলাকাটি পরিচিত ছিল হাজারিবাগান বলে। সুনসান হাজারিবাগান ছাড়াও এখন যেখানে বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে বা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের ডিপো, গোটা এলাকাটিই ছিল গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৭
Share:

রাস্তা দখল। পথচারি এবং সওয়ারি সকলকেই অসুবিধায় পড়তে হয় চাঁচলের বেশিরভাগ রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র।

রাজবাড়ির অলিন্দে দাঁড়িয়ে এক সময় যত দূর চোখ যেত, দেখা যেত জঙ্গলে ঘেরা সবুজের সমারোহ। এখন চোখ আটকে যায় কংক্রিটের জঙ্গলে।

Advertisement

১৯৫৭ সালে ব্লক, ১৯৭১ সালে থানা হয়েছে চাঁচলে। এখন যেখানে চাঁচল থানা, ব্লক, হাসপাতাল ও সেগুলিকে কেন্দ্র করে একেকটি পাড়া গড়ে উঠেছে, সেখানে বছর ষাটেক আগেও ছিল আমবাগান। এক হাজারটি আমগাছ ছিল বলে ওই এলাকাটি পরিচিত ছিল হাজারিবাগান বলে। সুনসান হাজারিবাগান ছাড়াও এখন যেখানে বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে বা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের ডিপো, গোটা এলাকাটিই ছিল গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ।

জঙ্গলে ভরা এলাকায় ছিল শেয়াল, হায়নার পাশাপাশি চিতাবাঘেরও অবাধ বিচরণ। তখন চাঁচলে বাস করতেন হাতে গোণা কিছু বাসিন্দা। তাই সন্ধ্যা নামতেই ঝপাঝপ ঝাঁপ বন্ধ করে ঘরে সেঁধিয়ে যেতেন তাঁরা। শেয়ালের ক্রমাগত হুক্কা হুয়া শব্দে ঘুম আসতে চাইত না। দিনের বেলাতেই খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হত। কেননা মাঝে মধ্যেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসত চিতাবাঘ। ঢুকে পড়ত বাড়িতেও। মহকুমা সদর চাঁচলের পুরনো দিনের কথা বলছিলেন চাঁচল রাজ অফিসিয়াল ট্রাস্টির চাঁচলের পরিদর্শক পিনাকীজয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। একদিন শুনলাম বামুনপাড়ায় সত্যেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে চিতাবাঘ ঢুকে পড়েছে। চারদিকে হুলস্থুল। পরে নিজের বন্দুক দিয়ে ওই চিতাবাঘটিকে গুলি করে মেরেছিলেন তিনি। অনেকের সঙ্গে আমিও দেখতে গিয়েছিলাম।”

Advertisement

চিতাবাঘ, হায়না, শেয়ালের বিচরণক্ষেত্র সেই চাঁচল এখন জনাকীর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। গাছগাছালিতে ভরা জঙ্গল উধাও হয়ে তা ভরেছে কংক্রিটের জঙ্গলে। ২০০১ সালে মহকুমা সদর হওয়ার পর যে জনপদের যাত্রা ফের নতুন করে শুরু হয়েছে বলা যায়। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে জমির দাম। ৪ হাজার টাকা শতকের জমি এখন ৪ লক্ষেও মেলা ভার। তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল বাড়ি, মার্কেট কমপ্লেক্স। কিন্তু জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সেই হারে সদরের বিস্তার ঘটেনি। বাড়েনি পথঘাটও। উত্তর-দক্ষিণে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও পূর্ব-পশ্চিমে নেতাজি সুভাষ রোড ও কলেজ রোডের দু’পাশকে কেন্দ্র করে জনবসতি বেড়ে চলেছে। জাতীয় সড়ক, কলেজ রোড দখল করেই যাত্রীরা প্রতীক্ষায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন বাস, অটো, ট্রেকার থেকে শুরু করে যন্ত্রচালিত ভ্যানে ওঠার জন্য। আবার ফুটপাথ জবরদখল করে চলছে পাকাপোক্ত দোকান। ফলে রাস্তার স্বল্প পরিসরে যাতায়াত করতে গিয়ে থমকে যাচ্ছে যানবাহন, ঠোকাঠুকি করে পথ চলতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব ক’টি রাস্তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটে জেরবার হয়ে থাকে। একেই বেহাল রাস্তাঘাট, তার উপরে সেগুলি জবরদখলে সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় যাতাযাত নিয়ে সমস্যায় জেরবার বাসিন্দারা।

১৯৫০ সালে প্রথম বাস চলে চাঁচলে। পঞ্জাব থেকে মালা সিংহ নামে এক বাসমালিককে চাঁচলে নিয়ে এসেছিলেন চাঁচলের রাজা। চাঁচল থেকে সামসি পর্যন্ত পেট্রোল চালিত ওই বাস যাতায়াত করত। তার আগে নদীপথে নৌকায় যাতায়াত করা হত। আর এখন! গত এক দশকেই যানবাহনের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। অটো, রিক্সা আর যন্ত্রচালিত ভ্যানের দাপটে অতিষ্ঠ সদরের বাসিন্দারা। কয়েকশো যন্ত্রচালিত ভ্যান সদরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ হয়নি। চাঁচল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দীপঙ্কর রাম বলেন, “যে কোনও শহরের সৌন্দর্যের অনেকটাই নির্ভর করে ওই এলাকার পথঘাটের উপরে। চাঁচলের পথঘাট দেখে তো মনে হয় না যে এগুলো কোনও মহকুমা সদরের রাস্তা।”

বছরের পর বছর ধরে পথ পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই। চাঁচল মিনিট্রাক, ম্যাক্সিট্যাক্সি ও অটোমালিক সমিতির সম্পাদক রবি ঘোষ বলেন, “রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ডের কথাও প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।” চাঁচলের বিধায়ক আসিফ মেহবুবের কথায়, “যতদিন না চাঁচল পুরসভা হচ্ছে, ততদিন নাগরিক পরিষেবার উন্নতির সম্ভাবনা নেই। পুরসভা না হওয়া পর্য়ন্ত পথঘাটের হাল ফিরবে বলেও মনে হয় না।” শুধু বিধায়ক নন। একই বক্তব্য প্রশাসনেরও। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই যুক্তি মেনে নিতে নারাজ।

(চলবে)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’। অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১। প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন