কালিম্পঙের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যের উত্সবে রবিবার ভিড় পর্যটকদের।
বড়দিনের প্রাক্কালে যেন পর্যটকদের ঢল নেমেছে কালিম্পঙে।
কোথাও পাহাড়ি ফুড ফেস্টিবল ঘিরে উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়, আবার কোথাও প্যারা গ্লাইডিং-এর জন্য লাইন দিচ্ছেন দেশ বিদেশের পর্যটকেরা। হোটেলে, অতিথি নিবাসে কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। টয়ট্রেন না থাকুক, কালিম্পঙের রিশপ ও লাগোয়া এলাকা থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের ছবি তোলার একেবারে ঠেলাঠেলি অবস্থা। যা কিনা, আশ্বস্ত করছে কালিম্পঙের বিধায়ক তথা মোর্চা নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রীকে। তাঁর কথায়, “চমত্কার আবহাওয়া। শীত উপভোগ করতেও এখন দলেদলে পর্যটকেরা আসছেন কালিম্পঙে। কারও যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই জন্য জিটিএ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা খেয়াল রাখছেন।”
বস্তুত, কালিম্পংকে দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করতে তুলে নেমে পড়েছেন অনেকেই। যেমন, কালিম্পঙের প্যারা গ্লাইডিং করিয়ে থাকেন যাঁরা, সেই সংস্থাগুলি বড়দিন উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছেন। আর তাতেই গুজরাত থেকে আসা জীতেন অগ্রবাল, পুনম অগ্রবালের মত নবদম্পতিরা উচ্ছ্বসিত। রবিবার দুপুরে আকাশে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন দুইজনে। গ্লাইডার থেকে নামার পর দুই জনে বললেন, “ভাবা যায় না। অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। জয়শলমীর ফিরে সবাইকে বলব কালিম্পং আসতে।” পাশে দাঁড়ানো সুখবের ছেত্রীকে (পাইলট) বারবার ধন্যবাদও জানালেন। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ফুচকা বিক্রেতা রামাবতার শর্মা। তিনি বললেন, “একটা সময়ে কখন বন্ধ হবে, কখন খোলা থাকবে, সেটাই লটারি পাওয়ার মতল ব্যাপার ছিল। এখন শান্তিতে ব্যবসা করছি। এই শীতেও রোজ ২ হাজার ফুচকা বিক্রি করছি।”
ঘটনা এটাই, অতীতে শীতের প্রাক্কালেও মোর্চার ফতোয়ায় জনতাকে ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। আবার কখনও বাইরে বার করে অবরোধও করতে হয়েছে। কিন্তু আপাতত সেসবই অতীত। একথা জানাচ্ছেন, মোর্চার নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের অনেকেই। যাঁরা, কালিম্পং থানার অদূরে ট্রাডিশনাল মাউন্টেন ফুড ফেস্টিবলে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। যেখানে মিলেছে, হারিয়ে যাওয়া নানা স্বাদের পাহাড়ি খাবার। শেল রুটিও বিক্রি হয়েছে অনেক। কলকাতার পর্যটকদের মধ্যে দেখা গিয়েছে, শেল রুটি নিয়ে কাড়াকাড়ি। মেদিনীপুরের সুমন্ত্র ধারা ও স্ত্রী সোমা ধারা, তাঁদের ক্লাস সেভেনের পড়ুয়া ছেলে সপ্তর্ষীকেও শেল রুটি ‘টেস্ট’ করিয়েছেন। সুমন্ত্রবাবু বললেন, “এই নিয়ে তিন দফায় কালিম্পং এলাম। এবারের মত নানা ফেস্টিবল, উদ্দীপনা আগে কখনও দেখিনি।”
অনেকেই স্বাদ নিচ্ছেন প্যারাগ্লাইডিংয়েরও।
বড়দিনের মুখে যেভাবে সেজেছে কালিম্পং, তা যে কারও চোখ টানবেই। যেমন, ডম্বরচক সন্ধ্যা থেকেই আলোর মালায় সেজে মোহময়ী হয়ে উঠেছে। শীতের সময় রাত নামলেই পাহাড়ি শহর সুনসান হওয়ার কথা। কিন্তু, কালিম্পঙে রাত ৯টা-তেও রেঁস্তোরায় ভিড়, নানা রিসর্টে ক্যাম্প ফায়ার, গানবাজনার দৃশ্য চোখে পড়েছে। মুম্বই থেকে ‘লোকেশনে’র খোঁজে আসা শ্যুটিং টিমকেও দেখা গিয়েছে রাত পর্যন্ত কালিম্পঙের রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে থাকা হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড টুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এতোয়া) এক সদস্য বললেন, “এই মুহুর্তে পেরু, কেনিয়া, আর্জেন্তিনা, ইংল্যান্ডের অন্তত শতাধিক পর্যটক রয়েছে কালিম্পঙে। তাতেই বড়দিনের উত্সব ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে।”
এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “কালিম্পঙে অ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটিস অসাধারণ। প্যারা গ্লাইডিং, তিস্তায় র্যাফটিং, রক ক্লাইম্বিং, বাইকিং সব ব্যবস্থা রয়েছে। আর শীতে আবহাওয়া একেবারে ঝকঝকে রয়েছে, তাই ঠান্ডার মধ্যেও পর্যটকদের ভিড় কালিম্পং জুড়ে।” তিনি জানান, কালিম্পংকে ঘিরে লাভা, লোলেগাঁও তো রয়েছেই, আলগাড়া, ডেলো, মুনসুং, পেদং, রিশি, সিলারিগাঁও, রেলিখোলাতেও পর্যটকেরা যাচ্ছেন। শহরের অর্কিড নার্সারি, আর্ট গ্যালারি, দূরবীনদারা গুম্ফা বাড়তি আকর্ষণ বাড়িয়েছে পর্যটকদের মধ্যে।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।