ভোটের আশাতেই কি কৃষ্ণেন্দুর গনি-বন্দনা, জল্পনা

ফের গনি-বন্দনায় পঞ্চমুখ হলেন মালদহের তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী তাঁর সঙ্গে গনিখানের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রকাশ্যে গর্ব করেছেন। উপলক্ষ্য ছিল মালদহ জেলা বইমেলার উদ্বোধনের মতো অরাজনৈতিক একটি অনুষ্ঠান। মেলার উদ্বোধনের পরে নিজের বক্তৃতায় মন্ত্রীর মুখে শোনা যায় তাঁর সঙ্গে গনিখান সাহচর্যের কথা। প্রয়াত নেতা কী ধরনের বই পড়তেন তাও এ দিন বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি ওঁর (গনিখানের) সাহচর্যে বিশেষ লাভবান হয়েছি।”

Advertisement

সায়নী মুন্সি

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২২
Share:

শীতের দুপুরে মালদহ বইমেলায়। ছবিটি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ফের গনি-বন্দনায় পঞ্চমুখ হলেন মালদহের তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী তাঁর সঙ্গে গনিখানের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রকাশ্যে গর্ব করেছেন। উপলক্ষ্য ছিল মালদহ জেলা বইমেলার উদ্বোধনের মতো অরাজনৈতিক একটি অনুষ্ঠান। মেলার উদ্বোধনের পরে নিজের বক্তৃতায় মন্ত্রীর মুখে শোনা যায় তাঁর সঙ্গে গনিখান সাহচর্যের কথা। প্রয়াত নেতা কী ধরনের বই পড়তেন তাও এ দিন বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি ওঁর (গনিখানের) সাহচর্যে বিশেষ লাভবান হয়েছি।”

Advertisement

কয়েক মাস পরেই ইংরেজবাজার পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরোচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই ভোট হওয়ার কথা। সে কারণেই মন্ত্রীর এ দিনের ‘গনি সাহচর্যে’র স্মৃতিচারণার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। তৃণমূল সূত্রেরও দাবি, মালদহের বাসিন্দাদের সহানুভূতি পেতে এখনও গণিখানের বিকল্প নেই। সারদা-সহ নানা ঘটনায় বিরোধীদের প্রচারে বাইরে তো বটেই দলের অন্দরেও যে অস্বস্তি রয়েছে তাও কোনও গোপন কথা নয় বলে তৃণমূলের ওই নেতারা স্বীকার করে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা ভোটের আগে থেকেই সহানুভূতি আদায় করতে মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজার পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুবাবু রাজনৈতিক কৌশলেই গনি-বন্দনাকে হাতিয়ার করলেন বলে তৃণমূল অন্দরের খবর।

এ দিন বইমেলার উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, চিকিত্‌সার কারণে বাইরে থাকায় সাংসদ মৌসম বেনজির নূর উপস্থিত ছিলেন না। বইমেলায় উপস্থিত তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের দাবি, গনি-ভাগ্নির অনুপস্থিতির সুযোগ নিতে ভুল করেননি কৃষ্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “তথ্য প্রযুক্তির দাপটে বর্তমানে বইয়ের পাঠক সংখ্যা কমছে। তবে সব সময়েই কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা বই খুঁজে যান। গণিখান চৌধুরী তেমনিই একজন মানুষ ছিলেন। আমি তাঁর সাহচর্যে বিশেষ লাভবান হয়েছি। তিনি বহু আর্ন্তজাতিক নেতা-নেত্রীদের আত্মজীবনী পড়তেন।”

Advertisement

মন্ত্রীর এই গনি-বন্দনায় অবশ্য কোনও রাজনৈতিক যোগ দেখছেন না জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর যুক্তি, “গনিখান সাহেব মালদহের গর্ব। সুতরাং তাঁর স্মৃতিচারণায় রাজনীতির কোন বিষয় নেই।” গত লোকসভা ভোটে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। নিজের মনোনয়ন পত্রে জমা দেওয়ার আগেও তিনি গনিখান চৌধুরীর ‘পথ’ই অনুসরণ করেছিলেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে পীর-না-পীর দরগায় এবং মনস্কামনা কালী মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিলেন। গণি-ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, বরাবরই মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে পীর-না-পীর দরগা এবং মনস্কামনা কালী মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করতেন প্রয়াত রেলমন্ত্রী গনিখান চৌধুরী। সে কারণে আসন্ন ভোটের আগে তৃণমূলের গনি-বন্দনা নতুন কোনও ঘটনা নয় বলে বিরোধীদের দাবি।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল ও কংগ্রেস গনিখানকে মুলধন হিসেবে ব্যবহার করে। ভোট এলেই তাঁর নাম বারবার বলে দুই দল সহানুভূতি টানতে চায়।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র রায় বলেন, “মালদহের রাজনীতিতে গনিখান যে আজও পুরোদস্তুর প্রাসঙ্গিক, তা এদিন ফের প্রমাণিত হল।” এ দিনের বইমেলার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষও। ২৬তম বইমেলার উদ্বোধন করেছেন সাহিত্যিক স্মরণজিত্‌ চক্রবর্তী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement