লোকসভা নির্বাচনের কাজে বীরভূমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের রায়গঞ্জ ডিপোর এক বাসচালকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা নাগাদ বীরভূমের মুরারইয়ের কনকপুর হাইস্কুল ভবনে নান্টু মণ্ডল (৫৫) নামে ওই চালক অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এরপর তাঁর সহকর্মী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁকে মুরারই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নান্টুবাবুর বাড়ি রায়গঞ্জের কলেজপাড়া এলাকায়। দেহটি আনার জন্য বীরভূমে রওনা হয়েছেন তাঁর পরিজন, প্রতিবেশী এবং সহকর্মীরা। এনবিএসটিসি-র রায়গঞ্জের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুবীর সাহা বলেন, “মৃত চালকের পরিবারের সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন।”
গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে নিগমের রায়গঞ্জ ডিভিশন থেকে লোকসভা নির্বাচনের কাজের জন্য ৫০টি বাস বীরভূমের রামপুরহাটের উদ্দেশে রওনা হয়। প্রতিটি বাসে দু’জন করে চালক ছিলেন। তার মধ্যে একটি বাসে নান্টুবাবু ও কালু মণ্ডল নামে আরেকজন চালক ছিলেন। ২৬ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত তিনি বাস নিয়ে রামপুরহাট থানায় ছিলেন। সন্ধ্যায় তাঁরা রামপুরহাট স্টেশন থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বাসে তুলে মুরারই থানার কনকপুর হাইস্কুলে যান। তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে কনকপুর হাইস্কুল ভবনেই ছিলেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নান্টুবাবু মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে।
মালদহ থেকে আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে আসার পর তিনি গত শুক্রবার থেকে মুরারই থানার কনকপুর হাইস্কুলে ছিলেন। তাঁর সঙ্গী কালু মণ্ডল জানান, সোমবার রাতে নান্টুবাবু স্থানীয় একটি ক্যান্টিনে রুটি মাংস খেয়ে হাইস্কুলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে নান্টুবাবু চা-বিস্কুট খেয়ে নিজের গাড়িতে বসে ছিলেন। আমি স্নান সেরে এসে দেখি উনি প্রচণ্ড ঘামছেন। তাঁকে অসুস্থ দেখে আমি জওয়ানদের ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা মেজরকে খবর দেই। ক্যাম্পের চিকিৎসক নান্টুবাবুকে পরীক্ষা করে দেখে তাড়াতাড়ি কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। তাঁকে গাড়িতে মুরারই ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে জানান।” মুরারই ১ ব্লকের বিএমওএইচ প্রবীর মার্ডি বলেন, “আমাদের কাছে ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া বলা যাবে না। তবে সন্দেহ করা হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।”
নান্টুবাবুর স্ত্রী কণিকাদেবী গৃহবধূ। তাঁর একমাত্র মেয়ে পিউদেবীর পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। নান্টুবাবুর প্রতিবেশী তথা রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস বলেন, নান্টুবাবু একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। খবর পেয়ে দুপুরে রামপুরহাট হাসপাতাল মর্গে নান্টুবাবুর জামাই পাপ্পু কুণ্ডু এবং পড়শিরা এসেছিলেন। ময়নাতদন্তের পরে দেহটি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রায়গঞ্জ ডিপোতে এ দিন শোকদিবস পালন হয়েছে।