ভিত্তি লোকসভা, এ বার বিজেপি-নজরে শিলিগুড়ি

লোকসভা ভোটের নিরিখে শিলিগুড়ি পুরসভায় ২১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকার সুবাদে ঘর গোছাতে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি। সব ঠিক থাকলে পুজোর আগে অথবা পরে পরেই হতে পারে শিলিগুড়ি পুরভোট। দল সূত্রের খবর, সে কথা মাথায় রেখে প্রার্থী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ জন চিকিৎসক, তিন জন ইঞ্জিনিয়র এবং দু’জন অধ্যাপক শিলিগুড়ি পুরভোটে বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে দলের কয়েকজন আলোচনাও শুরু করেছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০১:৩০
Share:

লোকসভা ভোটের নিরিখে শিলিগুড়ি পুরসভায় ২১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকার সুবাদে ঘর গোছাতে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি। সব ঠিক থাকলে পুজোর আগে অথবা পরে পরেই হতে পারে শিলিগুড়ি পুরভোট। দল সূত্রের খবর, সে কথা মাথায় রেখে প্রার্থী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ জন চিকিৎসক, তিন জন ইঞ্জিনিয়র এবং দু’জন অধ্যাপক শিলিগুড়ি পুরভোটে বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে দলের কয়েকজন আলোচনাও শুরু করেছেন।

Advertisement

তবে লোকসভা ভোটের ফলের পুনরাবৃত্তি যে পুরসভায় নাও হতে পারে সে কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই বিজেপির পালে বাতাস টানতে প্রচারের ঝড় তুলতে ছক কষেছেন দার্জিলিং জেলা নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে শিলিগুড়িতে পুরভোটের প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়, হেমা মালিনীর মতো তারকাদের পাঠানোর জন্যও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আর্জি পেশ করেছেন জেলা নেতৃত্ব। বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “শিলিগুড়ি পুর এলাকার মানুষ বহু বছর বামেদের শাসন দেখেছেন। তাদের কাজ-কারবার দেখে কংগ্রেস-তৃণমূলের হাতে পুরবোর্ড তুলে দিয়েছিলেন শহরবাসী। কিন্তু, গত সাড়ে চার বছর ধরে পুরবোর্ড চালানোর নামে কংগ্রেস-তৃণমূল কী ধরনের ঠেলাঠেলি করছে তা সকলেই দেখছেন। তাই সুশাসনের আশায় মানুষ আমাদের একবার সুযোগ দেবেন বলেই আশা করছি।”

সেই সঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি জানান, ইতিমধ্যেই নাগরিক সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিত্ব, দলীয় কর্মী, নেতাদের মধ্যে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্নদের নামের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “তাতে সমাজের নানা স্তরের অনেক বিশিষ্ট জনের সাড়া মিলছে। সবই রাজ্য নেতাদের জানানো হবে। শীঘ্রই পুরোদস্তুর প্রচারে নামা হবে। আগামী দিনে বাবুল সুপ্রিয় তো বটেই, হেমা মালিনীর মতো তারকাদেরও শিলিগুড়ি পুরভোটের লড়াইয়ে সামিল করানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।” দলের তরফে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরা যায় কি না তাও ভাবছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব।

Advertisement

দলের অন্দরের খবর, খোদ জেলা সভাপতি রথীন্দ্রবাবুকে মেয়র পদপ্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন দলের কয়েকজন। কিন্তু, জেলা সভাপতি সংগঠন চালানোর ব্যাপারে তিনি বেশি আগ্রহী বলে ওই বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্রাক্তন কোনও আমলা কিংবা অবসরের মুথোকা কোনও পদস্থ অফিসারকেও তুলে ধরা যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান একাংশ জেলা নেতা।

বস্তুত, গত লোকসভা ভোটে মোর্চা-বিজেপি জোট হলেও শিলিগুড়ি পুর এলাকায় বিজেপির পক্ষে এমন জনাদেশ দেখা যায়নি। কেন এমন হল, সেই ব্যাপারে কংগ্রেস-তৃণমূল ও বামেরা আলাদাভাবে হলেও একই যুক্তি দিয়েছেন। প্রত্যেকেই মোদী-হাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, বামেদের ভোট বিজেপির দিকে অকাতরে পড়েছে। পক্ষান্তরে, বামেদের দাবি, তৃণমূল বিরোধী ভোটও বিজেপি শিবিরে গিয়েছে। কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভা আসনের প্রার্থীর পক্ষ থেকে মোদী হাওয়া ও দলের একাংশের ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ ভূমিকার প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে।

কিন্তু, শিলিগুড়ির নাগরিক সমাজের কয়েকজন অন্য যুক্তি দিচ্ছেন। নাগরিক সমাজের কিছু প্রতিনিধিমনে করেন, বামেদের হটিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের হাতে পুরবোর্ড তুলে দেওয়ার পরে গঠনমূলক কাজ করতে না-পারায় গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে পৌঁছেছে। উপরন্তু, শহরে বেআইনি নির্মাণ, ট্রেড লাইসেন্স, পার্কিং ফি নিয়ে লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও পুরবোর্ড কড়া পদক্ষেপ করতে না-পারায় শহরবাসীরা অনেকেই উদ্বিগ্ন। শুধু তা-ই নয়, এসজেডিএ-এর বহু কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারকে জেরা করার বিষয় নিয়ে শহরে কম আলোড়ন পড়েনি। নাগরিক সমাজের তরফে প্রবীণ অধ্যাপক, সরকারি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক কিংবা প্রাক্তন পুলিশ কর্তা----এমন অনেকেরই ধারনা, শহরবাসীর একটা বড় অংশ যে বামেদের মতোই, কংগ্রেস-তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের আচরণ ও কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ তার খানিকটা হলেও প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে।

বামেরা অবশ্য খোলা মনেই আত্মসমালোচনা করতে চাইছেন। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “এটা দলের বিপর্যয় তো বটেই। আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে। ভুল শুধরে নিতে হবে। মানুষের আরও কাছাকাছি যেতে হবে।” তৃণমূলের তরফে জেলা কমিটির অন্যতম নেতা তথা কাউন্সিলর কৃষ্ণ পালের ধারণা, লোকসভা ভোটের ফলের প্রভাব পুরভোটে পড়বে না। তাঁর যুক্তি, “কংগ্রেসের পুরবোর্ড শহরের পুর পরিষেবা শিকেয় তুলেছে। সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত কংগ্রেসের পুরবোর্ড। মানুষ স্বচ্ছ ও দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসনের জন্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন। আগামী দিনেও থাকবেন।”

জেলা কংগ্রেসের নেতা তথা লোকসভা ভোটের পরাজিত প্রার্থী সুজয় ঘটক স্বীকার করেছেন, পুর এলাকায় তাঁদের ফল হতাশজনক। তাঁর যুক্তি অনুযায়ী, মোর্চা বিজেপিকে সমর্থন করেছে ও জিএনএলএফ তৃণমূলকে, এর প্রভাব নেপালিভাষী অধ্যুষিত এলাকায় পড়েছে। তবে তাঁদের দখলে থাকা বোর্ডের কাজকর্ম, পদাধিকারী কাউন্সিলরদের নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগরে প্রভাব ভোটে কী একেবারেই পড়েনি? সুজয়বাবু বলেন, “চটজলদি বিশ্লেষণ করা যাবে না। খোলা মনে সব ভাবতে হবে। কারও অন্তর্ঘাতমূলক ভূমিকা আছে কি না তাও নিশ্চয়ই প্রদেশ নেতৃত্ব দেখবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন