ভাড়া চেয়ে আন্দোলনের পথে উঃ দিনাজপুরের গাড়ি মালিকেরা

নির্বাচন পরিচালনা ও নানা সরকারি কর্মসূচী সফল করতে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন জেলার পরিবহণ মালিকদের কাছ থেকে শতাধিক গাড়ি ভাড়া নিলেও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়ার টাকা মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবহণ মালিকদের অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে জেলাশাসক সহ জেলার পরিবহণ দফতরের কর্তাদের কাছে লিখিতভাবে ভাড়া মেটানোর অনুরোধ করেও কোনও লাভ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৪
Share:

নির্বাচন পরিচালনা ও নানা সরকারি কর্মসূচী সফল করতে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন জেলার পরিবহণ মালিকদের কাছ থেকে শতাধিক গাড়ি ভাড়া নিলেও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়ার টাকা মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবহণ মালিকদের অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে জেলাশাসক সহ জেলার পরিবহণ দফতরের কর্তাদের কাছে লিখিতভাবে ভাড়া মেটানোর অনুরোধ করেও কোনও লাভ হয়নি। এমনকী, একাধিকবার দেখা করতে চেয়েও তাঁরা জেলাশাসকের দেখা পাননি। এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে সোমবার দুপুরে রায়গঞ্জের পুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসমালিকদের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন জেলার বাস, ট্রেকার ও ছোটগাড়ির মালিকেরা। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর পরিবহণ মালিকদের একটি প্রতিনিধিদল জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ভাড়া মেটানোর দাবি জানাবেন। নভেম্বর মাসের মধ্যে তাঁদের বকেয়া ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া না হলে পয়লা ডিসেম্বর থেকে জেলাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। পরিবহণ মালিকদের দাবি, গত এক বছর তিন মাস ধরে প্রশাসনের কাছে তাঁদের গাড়ি ভাড়া বাবদ ২১ লক্ষেরও বেশি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে।

Advertisement

জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক বলেন, “গত তিনমাস ধরে জেলাশাসক ও জেলা পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাধিক চিঠি দিয়ে ভাড়া মেটানোর অনুরোধ জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলেনি। আমরা ৫ নভেম্বর জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনারের কাছে গিয়ে অবিলম্বে ভাড়া মেটানোর দাবি জানাব। তাতেও কাজ না হলে পয়লা ডিসেম্বর থেকে জেলাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।”

ছোটগাড়ির মালিকদের সংগঠন রায়গঞ্জ মোটরকর্মী সংগঠনের সভাপতি আনন্দ দত্তের দাবি, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহের পরিবহণ মালিকেরা একই সময়ে একই কাজে প্রশাসনকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন আগেই ভাড়ার টাকা পেয়ে গিয়েছেন। জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে বলেন, “পরিবহণ মালিকদের অভিযোগ সঠিক নয়। প্রশাসনিক কিছু সমস্যা ও পরিবহণ মালিকেরা সময়মতো নির্ভুলবিল জমা দিতে না পারায় তাঁদের বকেয়া পেতে সাময়িক দেরি হচ্ছে। আইন মেনে আমরা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।” তাঁর দাবি, পরিবহণ মালিকেরা পদ্ধতি মেনে তাঁর সাক্ষাত প্রার্থনা না করায় তিনি তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

Advertisement

পরিবহণ মালিকদের দাবি, গত বছরের জুলাই মাসে কালিয়াগঞ্জ ও মালদহে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রশাসন তাঁদের কাছ থেকে দুদিন ও তিনদিনের জন্য ৫৩টি বাস ভাড়া নেয়। এরপর গত মে মাসে জেলায় লোকসভা নির্বাচনের সময় পরিবহণ মালিকদের কাছ থেকে তিনদিনের জন্য আরও ১২০টি বাস ভাড়া নেয়। এছাড়াও গত বছরের ২৭ নভেম্বর রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি অনুষ্ঠান সফল করতেও প্রশাসন তাঁদের কাছ থেকে একদিনের জন্য ২৩টি বাস ভাড়া নেয়। প্লাবনবাবু জানান, শুধু বাসমালিকদেরই গত এক বছর তিনমাসে প্রশাসনের কাছে ভাড়া বাবদ ৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৪০টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে।

মোটরকর্মী সংগঠনের সভাপতি আনন্দবাবুর দাবি,এবছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরদারি ও জেলায় লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার কাজে প্রশাসন তাঁদের কাছ থেকে অ্যাম্বাসেডর, টাটাসুমো, স্করপিও মিলিয়ে ১০৩টি গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল।ভাড়া বাবদ সাত লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। রায়গঞ্জ ট্রেকার অ্যান্ড অটো ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয় ঘোষের দাবি, রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ ব্লকে গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রশাসন তাঁদের কাছ থেকে তিনদিনের জন্য ২৭৬টি ট্রেকার ভাড়া নেয়। এরজন্য ভাড়া বাবদ ছ’লক্ষ ৯৫ হাজার ৫২০ টাকা বকেয়া আছে তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন