ভাড়া নিয়ে বচসা থেকে হাতাহাতিতে জখম হলেন অটো চালক। শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কালিয়াগঞ্জ এলাকায় ওই ঘটনার জেরে শনিবার জলপাইগুড়ি-রংধামালি রুটে অটো পরিষেবা বন্ধ রেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন চালকরা। দুপুরে থানায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। জখম অটো চালকের নাম মৃণাল সেন। রাতেই তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু পেটে ব্যথা না কমায় চিকিৎসকেরা শনিবার বিকেলে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
পুলিশ জানায়, জনৈক সুকান রায় সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এলাকায় ‘দাদাগিরি’ করার নানা অভিযোগ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায় বলেন, অভিযুক্তদের ধরার জন্য রাতেই কালিয়াগঞ্জ এলাকায় তল্লাশি করা হয়েছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ওঁদের গ্রেফতার করতে পারব।”
তৃণমূল প্রভাবিত উত্তরবঙ্গ মোটর কর্মী ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে জলপাইগুড়ি শহরের গোশালা মোড় থেকে রংধামালি সংলগ্ন কালিয়াগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দুজন যুবক মৃণালবাবুর অটোতে উঠে দিনবাজারে নামেন। অভিযোগ, অটো থেকে নামার পরে চালক তাঁদের কাছে মাথাপিছু ৭ টাকা ভাড়া চান। কিন্তু ওই দুই যুবক ৫ টাকার বেশি এক পয়সা দেবেন না বলে জানান। শুরু হয় বচসা। বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পরে ওঁরা ভাড়া না দিয়ে এলাকায় গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। হাসপাতালের শুয়ে জখম চালক মৃণালবাবু জানান, বিকেলের পরে তিনি যাত্রীদের নিয়ে রংধামালিতে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যার পরে ফেরার পথে সকালে দিনবাজারে যে দুই ব্যক্তি ভাড়া না দিয়ে চলে যায় তাঁরা রাস্তা আটকে তাঁকে দাঁড় করায়। তিনি বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগে ওঁরা গাড়ি থেকে নামিয়ে আমাকে পেটাতে শুরু করে। কাঠের বাটাম দিয়ে পেটে, পিঠে বুকে মারে। ওই অবস্থা দেখে অটোর যাত্রীরা নেমে যান। এলাকার লোকজন কোনওমতে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এর পরে কি হয়েছে বলতে পারব না।”
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে রাতেই শনিবার জলপাইগুড়ি-রংধামালি রুটে অটো চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে চালকরা কোতোয়ালি থানায় দুজনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। উত্তরবঙ্গ মোটর কর্মী ইউনিয়নের পাহাড়পুর ইউনিটের সম্পাদক বাপ্পা ঘোষ বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।”
তিনি জানান, জলপাইগুড়ি-রংধামালি রুটে ২৫টি অটো চলে। শুক্রবার রাতের মতো ঘটনা এর আগে হয়নি। বাপ্পাবাবুর দাবির সঙ্গে একমত রংধামালি গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ সরকার দিনবাজার স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “ভাড়া নিয়ে বচসা হতেই পারে। সে জন্য চালককে একা পেয়ে এভাবে মারধর করা হবে আর আমরা ভুগব এটা হতে পারে না। পুলিশের উচিত অভিযুক্তদের ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা।” অটো চালক রাজু দাস জানান, “গোশালা মোড় থেকে দিনবাজারের ভাড়া যে ৭ টাকা সেটা যাত্রীদের প্রত্যেকে জানেন। সেই ভাড়া না দিয়ে যদি এভাবে মারধর করা হয় তা হলে আমরা রাস্তায় চলব কোন সাহসে?”