মুরালিগঞ্জের স্কুল দেখে খুশি বিধানসভার কমিটি

শিক্ষক-শিক্ষিকা কারও অনুপস্থিতির কারণে ক্লাস বন্ধ থাকলে পড়ুয়াদের ‘ভিডিও ক্লাসে’ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখানো-র ব্যবস্থা রয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৯
Share:

শিক্ষক-শিক্ষিকা কারও অনুপস্থিতির কারণে ক্লাস বন্ধ থাকলে পড়ুয়াদের ‘ভিডিও ক্লাসে’ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখানো-র ব্যবস্থা রয়েছে।

Advertisement

মিড ডে মিলের রান্না ঘর থেকে সব ক্লাস ঘরে সিসি ক্যামেরা, স্কুলের বাগানের শাকসব্জি দিয়ে মিড ডে-র বাড়তি সব্জি। শিলিগুড়ির বিধাননগরের মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলের এমন সব ব্যবস্থা দেখে দেখে খুশি রাজ্য বিধানসভার শিক্ষা এবং গ্রন্থাগার বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। রাজ্যের অন্য স্কুলেও এমন কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ করবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে পড়ুয়ারা যাতে পরীক্ষার জন্য শুধু পড়া মুখস্থ না করে, পাঠ্যের সব শব্দ এবং বাক্যের মানেও যথাযথ বুঝতে পারে তার দিকেও নজর রাখার পরামর্শ দিলেন স্ট্যান্ডিং
কমিটির সদস্যরা।

শুক্রবার শিলিগুড়ির বিধানগরের ওই স্কুলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন, পড়াও জিজ্ঞেস করেছেন তাঁরা। ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠ্যবইয়ের সব শব্দ, বাক্যের যথাযথ মানে বুঝছে কি না তা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন সদস্যদের কয়েকজন এর আগেও বিভিন্ন জেলার স্কুলে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এ বিষয়ে সামগ্রিক ভাবে বিধানসভার স্পিকারকে রিপোর্টও দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। পরিদর্শনের শেষে স্কুলের শিক্ষকদের তাঁরা জানিয়েছেন পড়ুয়াদের সব শব্দের মানে যতটা সম্ভব ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া হোক। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ‘‘সব ক্ষেত্রেই পরিদর্শনের পরেই আমরা স্কুলকে বলি পড়ুয়াদের সব শব্দ এবং বাক্যের মানে বুঝিয়ে দিতে। এই স্কুল কর্তৃপক্ষকেও বলেছি।’’

Advertisement

এ দিন স্কুলের সব ক্লাসেই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পড়াও জানতে চেয়েছেন। মিড ডে মিলে কী খাওয়ানো হয়, পড়ুয়ারা কত দূর থেকে স্কুলে আসে সব খুটিয়ে জেনেছেন। প্রতিটি ক্লাসে ঢুকেই পড়ুয়াদের কাছে সমেবত ভাবে ‘গুডমর্নিং স্যার’ শুনেছেন কমিটির সদস্যরা, ক্লাস ছেড়ে বের হওয়ার সময়ে সকলে ফের উঠে দাঁড়িয়ে হবলেছে, ‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।’ কমিটির সদস্য বিধায়ক আশিস মার্জিত বলেন, ‘‘এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই পরিবারের মধ্যে প্রথম পড়াশোনা করছে। তাদের এমন সহবৎ নিশ্চই প্রশংসার।’’

বছর তিনেক আগে যামিনী রায় পুরস্কার পেয়ে রাজ্যের সেরা হয় এই স্কুল। ২০০১ সালে মাত্র ৬৫ জন পড়ুয়া নিয়ে শুরু করে চলতি বছর স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা দু’হাজারের কাছাকাছি। এ দিন স্কুলের ‘ভিডিও ক্লাসে’র উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটি। প্রজেক্টরের মাধ্যমে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ বা ‘অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট’ চ্যানেল দেখানো হয়। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে সেই ক্লাসের সময় পড়ুয়াদের ভিডিও ক্লাসে এনে এই চ্যানেলগুলি দেখানো হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম বলেন, ‘‘আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সিংহভাগ চা বাগান অথবা প্রত্যন্ত এলাকার। অনেকেই এই সব চ্যানেল দেখার সুয়োগ পায় না। সে কারণেই ওদের সাধারণ জ্ঞান বাড়ানোর জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রোজেক্টার মাধ্যমে স্কিনের পর্দায় চ্যানেল চলে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওদের মানে বুঝিয়ে দেন।’’

শিক্ষা দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ, অন্য স্কুলেও এ ভাবে ভাবা যেতে পারে। বিষয়টি আমাদের নজরে রইল।’’ মুরালীগঞ্জ স্কুল চত্বরেই জলাশয় রয়েছে। সেখানে হাঁস প্রতিপালন করে ছাত্র-ছাত্রীরা। রয়েছে ছোট বাগানও। সেখানে বর্তমানে কপি, লালশাক চাষ হচ্ছে। মরসুমি শাকসব্জি চাষ হয় বাগানে। এই শাকসব্জি দিয়েই মিড-ডে মিলও রান্না হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement