ফুলেশ্বরী নদীতে ফেলা জঞ্জাল। মন্ত্রীর ওয়ার্ডে পড়ে রয়েছে আবর্জনা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শহর সাফসুতো রাখতে ‘কিপ শিলিগুড়ি ক্লিন’ অভিযান শুরু হয়েছে। যার অন্যতম উদ্যোক্তা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। অথচ তাঁর ওয়ার্ডের আবর্জনা নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তার চেয়েও উদ্বেগের মন্ত্রীর ওয়ার্ডে আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে যুক্ত পুরকর্মীদের একাংশ এলাকার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ফুলেশ্বরী নদীতে ফেলছেন। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই। নদীর মধ্যে শহরের আবর্জনা কেন ফেলা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এমনকী শহরের পরিবেশপ্রেমীরাও তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওই ঘটনা জানতে পেরে চটেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও। তিনি বলেন, “কে বা কারা ওই কাজ করেছে তা দেখা হবে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলছি।”
বুধবার শহরের আবর্জনা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বদলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মেলার মাঠে ফেলা নিয়ে হইচই পড়ে। এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা তা নিয়ে সরব হন। সেই সঙ্গে এলাকার একাধিক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এ ভাবে শহরের মধ্যে আবর্জনা ফেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পরেই নদীতে শহরের আবর্জনা ফেলার অভিযোগ ওঠায় সচেতন বাসিন্দারা পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী বামেদের অভিযোগ, শহর সাফ রাখতে বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ এবং তা নিয়ম মেনে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলার পুরো ব্যবস্থাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ১৮ অগস্ট পুরসভায় প্রশাসক বোর্ড বসার পর কাউন্সিলররা পদে নেই। তাতে ওয়ার্ডের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সাফাই কর্মীদের কাজ নজরদারি করার লোক নেই। কর্মীদের উপর পুরসভার নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যাঁর মত কাজ করছেন। তার ফলেই এ সব ঘটছে।
পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “মন্ত্রীর ওয়ার্ডে এ দিন সকালে সাফাই করা হয়েছিল। পরে বাসিন্দারা আরও আবর্জনা ফেলেছেন বলে পুরকর্মীরা জানিয়েছে। তবে তা দ্রুত পরিষ্কার করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নদীর মধ্যে আবর্জনা ফেলার অভিযোগ গুরুতর। সে ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। এ ধরনের কাজ না করার জন্য কর্মীদের আগেও বলা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছিল নদীতে আর ফেলা হচ্ছে না।”
পুর কমিশনার যাই বলুন বাস্তব পরিস্থিতি যে অন্য তা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশই জানিয়েছেন। ওয়ার্ডে ফুলেশ্বরী নদীর সেতুর কাছেই বাড়ি উমা সাহা, সাধনা সাহাদের। উমা দেবী বলেন, “প্রতিদিনই পুরকর্মীরা ওয়ার্ডের একাংশের আবর্জনা তুলে এনে বাড়ির সামনে নদীতে ফেলেন। বারবার না করা হলেও তারা কথা শুনতে চান না। আবর্জনায় ফেলে নদীটাই নষ্ট হয়ে গেল।” একই সুরে অভিযোগ তোলেন সাধানা দেবীও। তিনি বলেন, “মন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে শহর পরিষ্কার রাখতে চাইছেন। অথচ পুরকর্মীরা তা শুনছেন না কেন? বাড়ির কাছে নদীর মধ্যে আবর্জনা ফেলতে আমরা অনেক বার নিষেধ করেছি।” পরিবেশপ্রেমী সংস্থা হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “নদীতে আবর্জনা ফেলা অপরাধ। যেখানে শহরের নদীগুলিকে পরিষ্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে সেখানে এ ধরনের কাজ কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
এ দিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনা স্তূপ দেখা গিয়েছে। হাকিমপাড়ায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বাড়ির কাছে মোড়ে এবং শিশু উদ্যানের সামনে আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে দিনভর। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা আগেই বলেছি যা প্রচার করার চেষ্টা হচ্ছে বাস্তবে তার কোনও কাজই হচ্ছে না।” বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু জানান, তিনি গত ১০ দিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরছেন। অধিকাংশ ওয়ার্ডে নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হচ্ছে না বলে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন।
এ দিন মহাবীরস্থান বাজার এলাকার পুরসভার তরফে ‘কিপ শিলিগুড়ি ক্লিন’-এর প্রচার অভিযান হয়। বুধবার বিধান মার্কেটে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অভিযান শুরু করলে সেখানে পুরসভার একাধিক আধিকারিক, পুলিশ কমিশনার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা সকলেই ছিলেন। অথচ এ দিন প্রচার অভিযানে পুর কমিশনার বা তেমন কোনও আধিকারিকদের দেখা যায়নি। অথচ পুরসভার প্রচার অভিযান হবে শুনে অনেকেই উৎসাহ নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা নিরাশ হয়েছেন। সাফাই বিভাগের কর্মীরা কিছু লিফলেট বিলি করেন। এলাকার একাংশের আবর্জনা পরিষ্কার করে চলে আসেন।