মহিলা কমিশনে প্রতিনিধি নেই উত্তরবঙ্গের, ক্ষোভ

রাজ্যে ক্ষমতাসীন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের কাজে আরও গতি আনতে উত্তরবঙ্গ থেকে একযোগে ৪ জনকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে উত্তরবঙ্গের নানা জেলার অভিযোগকারিণীদের কলকাতায় ছোটাছুটি করা কিংবা কবে কমিশনের প্রতিনিধিরা জেলায় পৌঁছবেন, সেই আশায় বসে থাকতে হচ্ছিল না। সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও দ্রুতগতিতে হচ্ছিল। কিন্তু সরকার গঠনের ৩ বছরের মাথায় পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের নতুন কমিটিতে উত্তরবঙ্গের কেউ মনোনীত হননি।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:১২
Share:

রাজ্যে ক্ষমতাসীন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের কাজে আরও গতি আনতে উত্তরবঙ্গ থেকে একযোগে ৪ জনকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে উত্তরবঙ্গের নানা জেলার অভিযোগকারিণীদের কলকাতায় ছোটাছুটি করা কিংবা কবে কমিশনের প্রতিনিধিরা জেলায় পৌঁছবেন, সেই আশায় বসে থাকতে হচ্ছিল না। সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও দ্রুতগতিতে হচ্ছিল। কিন্তু সরকার গঠনের ৩ বছরের মাথায় পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের নতুন কমিটিতে উত্তরবঙ্গের কেউ মনোনীত হননি। এতে নানা সমস্যায় কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইলেও তা পেতে তুলনামূলক ভাবে বেশি সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করছেন মহিলা নির্যাতন রোধে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

Advertisement

এ কথা মানছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “কমিশনে এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধি রাখতে হবে, এমন কোনও বিধি নেই। কিন্তু এটা ঠিক, আগের কমিটিতে উত্তরবঙ্গের একাধিক প্রতিনিধি থাকায় সেখানকার অভিযোগের নিষ্পত্তি দ্রুত হচ্ছিল। উত্তরবঙ্গের একাধিক সদস্যা প্রশংসনীয় কাজও করেছেন। এবার উত্তরবঙ্গের কেউ না-থাকায় আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ পাঠাতে হবে। আমরা পদক্ষেপ করব। প্রয়োজনে টিম যাবে।”

বিধি অনুযায়ী, চেয়ারপার্সন সহ ১২ জন সদস্যা থাকার কথা। তাঁরা নানা ক্ষেত্র থেকে মনোনীত হন। সেখানে এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব করার কোনও নিয়ম নেই। কিন্তু তৃণমূল জমানায় মহিলা কমিশনে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের দলীয় বিধায়ক মাহমুদা বেগম, মালদহের নেত্রী শেহনাজ কাদরি, উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল নেত্রী কেয়া চৌধুরী ও শিলিগুড়ির আইনজীবী তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর জ্যোৎস্না অগ্রবালকে মনোনীত করা হয়।

Advertisement

কমিশন সূত্রের খবর, হাতের কাছে সদস্যারা থাকায় নানা জেলায় অভিযোগের নিষ্পত্তি আগের চেয়ে তাড়াতাড়ি হয়েছে। যেমন, দক্ষিণ দিনাজপুরের কথা ধরা যাক। সেখানে এক বিধবা মহিলাকে রাত-বিরেতে বিরক্ত করতেন এলাকার এক ব্যবসায়ী। পুলিশকে বলেও লাভ হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা ওই এলাকার মহিলা কমিশনের সদস্যার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। ওই সদস্যার ফোনে রাতারাতি ব্যবসায়ীকে ডেকে পুলিশ ধমকাতেই কাজ হয়ে যায়।

মালদহের এক স্বামী বিচ্ছিন্না মহিলা বিড়ি শ্রমিককে উত্ত্যক্ত করতেন এক ঠিকাদার। থানা-পুলিশে গিয়ে কাজ হয়নি। বিড়ি শ্রমিক মহিলা এলাকার মহিলা কমিশনের সদস্যার কাছে গিয়ে সব বলেছিলেন। লিখিত দিতে হয়নি। সব শুনেটুনে ফোনে পুলিশকে ভর্ৎসনা করতেই ঠিকাদার ক্ষমা চেয়ে নিতে বাধ্য হয়।

সুকনা এলাকা এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে জবরদস্তি উচ্ছেদ করে ধর্মস্থানের জমি দখলের চেষ্টা করছিল একটি দালাল-চক্র। থানা-পুলিশ করেও লাভ হয়নি। অগত্যা মহিলা কমিশনের সদস্যা তথা তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সন্ন্যাসিনী। বিষয়টি শুনেই কমিশনের চেয়ারপার্সনকে সব জানিয়ে থানার ওসি থেকে ডিসি, সিপি অবধি সকলকে ফোন করেছিলেন জ্যোৎস্না দেবী। রাতারাতি দালাল-চক্র হাত গুটিয়ে সরে পড়তে বাধ্য হয়েছিল।

কমিশনের নথি অনুযায়ী, গত তিন বছরে উত্তরবঙ্গের ৬ জেলা থেকে অন্তত শতাধিক অভিযোগ মহিলা কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। যার মধ্যে অন্তত ৭০টি অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় সদস্যারাই চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে চাপ দিয়ে কাজ আদায় করিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্র চেয়ারপার্সনকে হস্তক্ষেপই করতে হয়নি।

কিন্তু নতুন কমিটি গঠনের পরে এখন কী হচ্ছে?

শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে চম্পাসারির একটা ঘটনা শোনা যাক। গত বছরে আলিপুরদুয়ারে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে এক সিআইডি কর্মীর মৃত্যু হয়। তাঁর চম্পাসারিতে একটি জমি কেনা রয়েছে। পুলিশকর্মীর মৃত্যু হতেই জমিটি দখল করতে সক্রিয় হয় একটি চক্র। ওই পুলিশকর্মীর স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে জমিটি আগলে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রাক্তন সদস্যা জ্যোৎস্না দেবী। সম্প্রতি কমিশনের সদস্য পদ গিয়েছে তাঁর। এখন জ্যোৎস্না দেবীর কথা শুনলেও পুলিশ গয়ংগচ্ছ ভাব দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ পুলিশকর্মীর স্ত্রী-র। তিনি বলেন, “এখন আমাকে কলকাতা ছোটাছুটি করতে হবে।”

একই অভিজ্ঞতা হিলকার্ট রোড লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা এক ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী ও তাঁর মায়ের। মেয়েকে এলাকার এক দুষ্কৃতীর নজর থেকে বাঁচাতে মা একাধিকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। দুষ্কৃতী গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু শাগরেদরা নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছে মা মেয়েকে। অগত্যা মা-মেয়ে মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইতে গিয়েছিলেন জ্যোৎস্না দেবীর কাছে। কিন্তু তিনি তাঁদের কলকাতার ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন। কলকাতায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। তা পৌঁছনোর পরে কবে সেখান থেকে পদক্ষেপ করা হবে সেটাই বুঝতে পারছেন না ইংরেজি অনার্সের ছাত্রীটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন