যানজটে নাকাল শহর। রায়কতপাড়া মোড়ে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
সদর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ছোট গাড়ি নিয়েই কিছুটা এগোতেই মাঝরাস্তায় থমকে দাঁড়াতে হল চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ সুশান্ত রায়কে। তখন বিকেল ৩টে। দিনবাজার তেমাথা মোড় সংলগ্ন এলাকা জুড়ে ছোট-বড় গাড়ির লম্বা জট। আধ ঘণ্টা বাদে সেমিনারে যেতে হবে। ঘনঘন ঘড়িতে চোখ গেল। ভিড় কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন উপায় নেই। প্রায় কুড়ি মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে গাড়ির চাকা ঘুরল। হাঁফ ছাড়লেন চিকিত্সক। শুক্রবার বিকেলের ঘটনা। তবে এমন হামেশাই হচ্ছে। জলপাইগুড়ি শহরে।
এই ভাবেই নিত্য যানজটে ক্লান্ত ১৪৬ বছরের প্রাচীন জলপাইগুড়ি জেলা সদর। ফাঁকা রাস্তায় নিরাপদে শহরে চলাফেরার কথা ভুলতে বসেছেন অনেক বাসিন্দাই।
গত বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ জেলা দায়রা আদালতের সামনে রিকশায় উঠে বসেন বিজ্ঞানের শিক্ষক দীপঙ্কর দাস। করলা সেতুর ও পার থেকে বাস ধরে ধূপগুড়িতে যাবেন। বড়জোর আধ কিলোমিটার রাস্তা। খুব বেশি হলে ১৫ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু যানজটে জড়িয়ে আধ ঘণ্টাতেও পৌঁছতে পারেননি।
অথচ ট্রাফিক সিগন্যাল, ট্রাফিক পুলিশ, নো পার্কিং বোর্ড সবই রয়েছে। তবু কেন ওই দশা? শহরের প্রবীণ আইনজীবী কমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ট্রাফিক সিগন্যাল, ট্রাফিক পুলিশ, নো পার্কিং বোর্ড থাকলে কি হবে? মানছে কে! সামান্য সচেতনতা আছে কি!”
পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুর মতে, “ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলার ইচ্ছা এবং ধৈর্যের ঘাটতি বাড়লে চলবে না। সকলকে ট্রাফিক বিধি মানা অভ্যাস করতে হবে।”
প্রতিদিন সকাল ৯টার পর থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৩টে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হাসপাতাল মোড়, দিনবাজার তেমাথা মোড়, করলা সেতু, মার্চেন্ট রোড, থানা রোড, টেম্পল স্ট্রিট, কদমতলা, ডিবিসি রোড, তিন নম্বর ও চার নম্বর ঘুমটি, বউবাজার, মাসকলাই বাড়ি, পোস্ট অফিস মোড় এলাকায় গেলে জট দেখে মাথা ঘুরে যেতে পারে। যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করে রাখা হচ্ছে। যেখানে সেখানে বাস, অটো রিকশা যাত্রী তুলছে। সঙ্গে গাড়ির হর্ন, চেঁচামেচি।
নিত্যদিন তাই হিমশিম খান অফিসযাত্রী ও স্কুল কলেজ পড়ুয়ারা। সকাল ৯টার পর থেকে বেলা একটা পর্যন্ত শহরের ব্যস্ততম প্রতিটি রাস্তা চলে যায় ছোট গাড়ি, টোটো এবং অটো রিকশার দখলে। দিনবাজার থেকে থানা রোড জুড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শতাধিক মোটরবাইক। রাস্তার বাকি অংশটুকু চলে যায় রিকশার দখলে। দিনবাজার থেকে বেগুনটারি মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এমনই দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে রাস্তায় ছোট ট্রাক দাঁড় করিয়ে চলে পণ্য ওঠানো-নামানো। গুঁতোগুঁতি করে যান পথচারীরা। রীতিমতো প্রাণ হাতে নিয়ে ফাঁকফোঁকর দিয়ে গলে যাতায়াত করে স্কুল পড়ুয়ারা।
(চলবে)