ধূপগুড়িতে মৃত পাঁচ, উদ্ধার শিশু

রেল লাইনের পাশে চারটি দেহ, রহস্য

ভোরের আলো ফুটতেই রেল লাইনের ধারে ঝোপের মধ্য থেকে উদ্ধার হল চারটি দেহ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। চার বছরের একটি শিশুকন্যা জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার ভোরে ধূপগুড়ি ও বেতগাড়া স্টেশনের মাঝখানে রেল লাইন থেকে মাত্র ১৫ ফুট দূরত্বে ঝোপের মধ্যে থেকে দেহ গুলি উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

উদ্ধার করা হচ্ছে জখম শিশুকন্যাকে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ভোরের আলো ফুটতেই রেল লাইনের ধারে ঝোপের মধ্য থেকে উদ্ধার হল চারটি দেহ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। চার বছরের একটি শিশুকন্যা জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার ভোরে ধূপগুড়ি ও বেতগাড়া স্টেশনের মাঝখানে রেল লাইন থেকে মাত্র ১৫ ফুট দূরত্বে ঝোপের মধ্যে থেকে দেহ গুলি উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

এই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় গধেয়াকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের বগরিবাড়ি এলাকার হোগলাপাতা গ্রামে। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছয়েকের এক শিশু কন্যা, আট ও দশ বছরের দুই বালক এবং বছর চল্লিশের একজন মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতালে মারা যান বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। তাঁদের কারও পরিচয় জানা যায়নি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা মৃতরা একই পরিবারের সদস্য। কিন্তু কী করে ওই পাঁচজনের মৃত্যু হল সে ব্যাপারে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি।

আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম বীরেন্দ্র কুমার বলেন, “মৃত ও আহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। জিআরপি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এদিন ভোরে মৃতদেহগুলি ঝোপের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। মৃতদের কাছ থেকে কোনও টিকিট বা পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি।”

Advertisement

রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার জানান, কোনও স্টেশনে চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করানো অথবা দুর্ঘটনার কোনও খবর মেলেনি। জেলা পুলিশ সুপার কুনাল অগ্রবাল বলেন, “মৃতরা যে স্থানীয় বাসিন্দা নয় প্রাথমিক ভাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। তবে তাঁরা কোন এলাকার বা কোথায় যাচ্ছিলেন তা জানা সম্ভব হয়নি। তদন্ত চলছে।”

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রেল লাইনের ধরে জমিতে চাষের কাজ করতে যান নিরঞ্জন কর্মকার। সে সময় একটি ঝোপের আড়াল থেকে শিশুর আর্তনাদ শুনতে পান তিনি। বাড়ি ফিরে গৌর মণ্ডল নামে এক প্রতিবেশীকে ডেকে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন চারজনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। বছর পঞ্চাশের ব্যক্তি কোনও মতে শ্বাস নিচ্ছেন। শিশুটি বসে কাঁদছে। তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। চারপাশে প্লাস্টিকের চটি, ছেঁড়া জামা-কাপড় ছড়িয়ে রয়েছে। নিরঞ্জনবাবু বলেন, “এ সব দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। শিশুটিকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যাই। ও শুধু কাঁদছিল।” নিরঞ্জনবাবু জানান, শিশুটির চিকিৎসার জন্য প্রথমে এলাকার এক হাতুড়ে চিকিৎসককে ডাকা হলেও ঘটনা শুনে ভয়ে চলে যান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জলঢাকা সেতু পাহারায় থাকা রেল পুলিশের কর্মীদের জানালে তাঁরা ধূপগুড়ি থানা এবং দমকলে খবর দেন। পৌনে ন’টা নাগাদ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মৃতদেহগুলি উদ্ধারের পাশাপাশি জখম দু’জনকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানেই বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি মারা যান। চিকিৎসকরা জানান, জখম শিশুটি ট্রমার মধ্যে আছে।এদের প্রত্যেকের শরীরে রেল লাইনে থাকা পাথরের আঘাত ছিল।

মৃত ও আহতদের চেহারা ও পোশাক দেখে গ্রামবাসীদের অনুমান, এরা যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষ। বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রতিবছরই ধানকাটার মরসুমে গ্রামে আসেন এরা। তাবু খাটিয়ে কিছুদিন থেকে আবার চলে যান অন্যত্র। তবে পুলিশ এব্যাপারে কিছু বলতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন