মঞ্চে মন্ত্রী গৌতম দেব। সভায় খালি পড়ে রয়েছে দর্শকাসন। নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তৈরি রাস্তার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সভায় অধিকাংশ চেয়ারই ছিল ফাঁকা। যা দেখে বিব্রত উদ্যোক্তাদেরই একাংশ। সোমবার শিলিগুড়ির চম্পাসারি মোড় লাগোয়া এলাকায় মঞ্চ থেকে ওই রাস্তার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। রাস্তা তৈরি করতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। দল সূত্রের খবর, সভার পরে সেখানেই একটি ঘরে স্থানীয় নেতাদের ডেকে ধমক দিয়েছেন। দলের অন্দরে কোন্দলের জেরেই এই ঘটনা বলে তৃণমূলের একাংশের ধারণা।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর উদ্যোগে করা প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠান। মন্ত্রী নিজে উপস্থিত। দেড়শোর বেশি চেয়ার পাতা হয়েছে মঞ্চের সামনে। আরও অন্তত ১০০ চেয়ার কাছেই ম্যাটাডোরের উপর ডাঁই করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলিও নামানো হবে বলে। সেগুলি নামানোর দরকার তো পড়েইনি উল্টে জনা ৪০ লোক নিয়ে কোনও রকমে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ করলেন উদ্যোক্তা এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রীর যুক্তি, “সভার সময় নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। তাতে সমস্যা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” তাঁর মতে ২টা নাগাদ এই সভা করার কথা। তা নিয়ে লোকজনের মধ্যে বিভ্রান্তি হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, সরকারি অনুষ্ঠান হলেও দলের স্থানীয় নেতারা কেন এ দিন অনুষ্ঠানের বিষয়টি বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরে তাঁদের সভামুখী করতে পারেননি তা জানতে চান মন্ত্রী। ওই ওয়ার্ডে দলের দুই আহ্বায়ক মনা পাল এবং দিলীপ বর্মন-সহ কয়েকজন নেতাকে একটি ঘরে ডেকে এ দিন এই অনুষ্ঠানে কেন লোক আসেনি, কেন বাসিন্দাদের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়া হয়নি? কেন এলাকায় দলের নেতাদের মধ্যে সমন্বয় নেই তা নিয়ে কৈফিয়ত চান। দলের মধ্যে থেকে কেউ দলেরই ক্ষতি করার চেষ্টা করছে কি না তা দেখা হবে বলে ধমক দেন বলেও দল সূত্রের খবর। তৃণমূলের পক্ষে মনাবাবু বলেন, “এ দিন অনুষ্ঠানের খবর আগে থেকে সঠিক ভাবে না জানানোয় সমস্যা হয়েছে।” দিলীপবাবুর বক্তব্য, “মন্ত্রীর ক্ষোভ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এত কোটি টাকা খরচ করে এলাকায় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে অথচ মানুষকে তাতে সামিল করা যায়নি।” এর পরেই দিলীপবাবুর খেদোক্তি, “এলাকায় দলে চার জন মাথা হলে কার কথায় কাজ হবে সেটা নিয়েই সমস্যা হয়।”
এসজেডিএ’র তরফে অবশ্য অনুষ্ঠান বেলা সাড়ে ১১টাতে বলেই জানানো হয়েছিল। সে সময় অবশ্য দলের দুই তিনজন নেতা ছাড়া কেউ ছিলেন না। এই অনুষ্ঠানের আগে ওই ওয়ার্ডেই গীতা দেবী ছটপুজা ঘাটের সংস্কার প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল মন্ত্রী। বেলা ১১টায় ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় বেলা ১২টা নাগাদ। সেখানেও তেমন ভিড় জমেনি বলে অভিযোগ। ওই অনুষ্ঠান শেষ করে মন্ত্রী যখন চম্পাসারি মোড়ের মঞ্চের উদ্দেশে রওনা হবেন তখনও মিলন দত্ত, সৌমিত্র কুণ্ডুর মতো কয়েকজন তৃণমূল নেতা ছাড়া চম্পাসারি মোড়ের সভায় কেউ নেই।
বেলা ১ টা নাগাদ মন্ত্রী যখন পৌঁছন তখনও অধিকাংশ আসন ফাঁকা। সামনের কয়েকটি সারিতে ৩০ জনের মতো বসেছেন। একদম শেষের সারিতে বসেছেন জনা দশেক। অধিকাংশ তৃণমূল কর্মী। তা দেখে মন্ত্রী মঞ্চে না উঠে পাশে এক জায়গায় কিছুক্ষণ বসেন। মঞ্চে যিনি ঘোষণা করছিলেন তিনি পরিস্থিতি সামলাতে ‘রোদের কারণে অনেকে আসেননি’ এবং ‘কর্মব্যস্ততা’র কথা বলে সামলানোর চেষ্টা করেন। এর পর মঞ্চে উঠে ১৫ মিনিটের মধ্যেই মন্ত্রীর বক্তব্য রাখা হলে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন এসজেডিএ’র সহকারি কার্যনির্বাহী আধিকারিক অশ্বিনী রায়।