রাসায়নিক ছড়িয়ে দুই শিশু-সহ পরিবারের প্রত্যেককে অচেতন করে সর্বস্ব লুঠ করে পালাল দুষ্কৃতীরা। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ডাটিয়ন এলাকায় বুধবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ওই দুই শিশু-সহ পরিবারের ছ’জনকে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করান প্রতিবেশীরা। পরে একজনের জ্ঞান ফেরে। বাকি পাঁচ জনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যদিও কী ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করে ওই পরিবারের সদস্যদের অচেতন করা হয়েছে, তা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সাধারণ নিম্নবিত্ত ওই পরিবারটিতে এই ভাবে লুঠ চালানোর কারণ স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছেও। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের আরও দাবি, স্থানীয় কোনও দুষ্কৃতী চক্র রাসায়নিক প্রয়োগের ফলাফল কী হয়, তা দেখার জন্য ওই কাজ করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে খাওয়া সেরে একটি ঘরে শুয়ে পড়েন গৃহকর্তা আমির হোসেন ও তাঁর স্ত্রী কুলসুম বিবি। পাশের ঘরে দুই ছেলে-মেয়ে কাজিরুল, খালেদা ও স্ত্রী সানতারা বিবির সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন আমির হোসেনের ছেলে মহম্মদ জালাল। ঘরের জানলা খোলা ছিল। ঘরের বেড়ার দরজাও সহজে খোলা সম্ভব। সামান্য জমিতে কৃষিকাজ করেই পরিবারটির সংসার চলে।
বৃহস্পতিবার বেলা গড়িয়ে গেলেও কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা ঘরে উঁকি মারেন। দেখেন, দরজা খোলা। সকলেই অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। জামা-কাপড়, বাসনপত্র বা মজুত ফসল-- সবই উধাও। প্রতিবেশীরা সবাইকে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। কিছুক্ষণ পরে মহম্মদ জালালের জ্ঞান ফেরে। বাকিদের তখনও জ্ঞান না ফেরায় তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিএমওএইচ ছোটন মণ্ডল বলেন, “আমির হোসেন ও তাঁর স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা নিশ্চিত, রাসায়নিক কিছু প্রয়োগ করার ফলেই ওই ঘটনা ঘটেছে।” তবে কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, তা ফরেন্সিক পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর। মহম্মদ জালাল বলেন, “খেয়েদেয়ে আমরা শুয়ে পড়েছিলাম। তার পর সকালে আচ্ছন্ন অবস্থায় দেখি, যে সবাই ঘুমিয়ে রয়েছে। কী হয়েছে, প্রথমে বুঝতে পারিনি।”
ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই পরিবারের দুই প্রতিবেশী আব্দুল ওদুদ, হবিবুর রহমানরা বলেন, “গরমে বাড়ির জানালা খুলেই ঘুমোই। এর পর ঘরের জানলা খুলে ঘুমনোর কথা ভাবতেই পারছি না।”