লক্ষ্য স্বপ্নপূরণ, পড়তে চায় বাবুরা

বড় হয়ে চিকিত্‌সক হয়ে মায়ের চিকিত্‌সা করাতে চায় বছর দশকের বাবু রায়। পাশ থেকে বিশাল রাহুত জানায়, সে বড় হয়ে বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়াবে। তারও বয়স দশ। শুধু বিশাল ও বাবু নয়, ঘরের মেঝেয় শতরঞ্চিতে বসে থাকা আরও ৪৮ শিশুর চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০২:২৬
Share:

বড় হয়ে চিকিত্‌সক হয়ে মায়ের চিকিত্‌সা করাতে চায় বছর দশকের বাবু রায়। পাশ থেকে বিশাল রাহুত জানায়, সে বড় হয়ে বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়াবে। তারও বয়স দশ। শুধু বিশাল ও বাবু নয়, ঘরের মেঝেয় শতরঞ্চিতে বসে থাকা আরও ৪৮ শিশুর চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

Advertisement

জলপাইগুড়ি শহরের জয়ন্তীপাড়ায় ক্লাব ঘর ভাড়া নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদানে তৈরি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ওরা সকলেই। বছর তিনেক আগে শিক্ষকেরা এই এলাকার শিশু শ্রমিকদের স্কুলে টেনে এনেছেন। স্কুল শিক্ষকদের মতে, সেখান থেকে নতুন জীবনের স্বাদ গ্রহণের আগ্রহ শিশু শ্রমিকদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারে। ২০০৮ সাল থেকে শ্রম দফতরের তত্ত্বাবধানে জয়ন্তী পাড়ার মতো জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ১৯টি শিশু শ্রমিক স্কুল চলছে। জলপাইগুড়ির সহকারী শ্রম আধিকারিক আর্থার হোর বলেছেন, “পড়ার সুযোগ পেয়ে শিশুরা ভাল মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শিখেছে।”

ভোর হলে মায়ের সঙ্গে কাজে বেরিয়ে পড়তে হয় কাউকে। কেউ আবার সাফাইয়ের কাজে মাকে সাহায্য করে। সকালে টাকা রোজগার করতে চায়ের দোকানে কাপ প্লেট ধুতে হয়। ঘড়ির কাটা সাড়ে দশটা ছুঁয়ে গেলে ঘরে ফিরে জামা প্যান্ট পাল্টে বইখাতা নিয়ে সোজা স্কুলে যেতে হয়। বিশাল বলে, “বাড়িতে থাকলে মায়ের সঙ্গে সাফাইয়ের কাজে যেতে হয়। তাই স্কুলে থাকতেই ভাল লাগে।” একই অনুভূতি চম্পা ছেত্রীর। চম্পা বলে, “বড় হয়ে দিদিমণি হতে চাই। বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়াতে চাই।”

Advertisement

ছাত্রদের কথা শুনে মুচকি হাসেন স্কুলের শিক্ষিকা রমিতা রাউত ও উপাসনা বিশ্বাস। পড়ুয়াদের সকলেরই সাদা জামা, নীল প্যান্ট ইউনিফর্ম। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রতিম চৌধুরী বলেন, “তৃতীয় শ্রেণির ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্য স্কুলের পড়ুয়াদের সাধারণ ভাবে কোনও রকম পার্থক্য নেই। অন্য শিশুরা যখন খেলে বেড়ায়, ওরা তখন হাড় ভাঙা খাটুনি খাটে। এটা ওঁদের ভাল লাগে না। তাই স্কুলে এসে অন্য জগত্‌ পায়। তাই শুধু স্বপ্ন দেখে।”

বিদ্যালয়ে পঞ্চাশ শিশু শ্রমিককে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এর পরে অন্য কোনও সরকারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সালে স্কুলের শুরুতে যারা ভর্তি হয়েছিল তারা ২০১২ সালে চতুর্থ শ্রেণি পাশ করে অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। এখন যারা আছে ২০১৬ সালে অন্য স্কুলে চলে যাবে তারা। তখন আবার নতুন শিশু শ্রমিকদের ডেকে এনে পড়াশোনা করানো হবে। প্রধান শিক্ষক জানান, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ থেকে পড়ুয়াদের বই, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পোশাক দিয়ে সাহায্য করেন। স্কুলে রয়েছে মিড ডে মিলের ব্যবস্থাও। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান ধর্তিমোহন রায় বলেছেন, “শ্রমিক স্কুলটি ভালই চলছে। আমরা যথাসাধ্য সাহায্যের চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন