পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির (ডবলুবিটিএ) জেলা সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে বনমন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মনের নাম থাকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে শাসক দল তৃণমূলের মধ্যেই। ওই সম্মেলনেই প্রধান অতিথি হিসেবে তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহের নাম রয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করেছেন, “ওই শিক্ষক সংগঠন কংগ্রেস প্রভাবিত। তৃণমূলের নিজস্ব শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে দলীয় নেতারা যেতে পারেন না।”
বনমন্ত্রী বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সাংসদ দলের জেলা সভাপতির দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সময় থাকলে তিনি অনুষ্ঠানে যাবেন বলেও জানিয়েছেন। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকেও অন্য রাজনৈতিক প্রভাবিত সংগঠনে কেন দলের পদাধিকারী যাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সাংসদ রেণুকা সিংহ বলেন, “এটি ডানপন্থী শিক্ষক সংগঠন। আমরা যেতেই পারি। এখানে তো শিক্ষকদের সুবিধে অসুবিধে নিয়ে আলোচনা হবে। সিঙ্গুরে ওই সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।”
বনমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, সাংসদের আপ্ত সহায়ক শিশির সরকার জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠনের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ তাঁকে করেছেন। বনমন্ত্রী বলেন, “শিশিরবাবু ওই সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর আমন্ত্রণেই সাড়া দিয়েছিলাম। আমি কলকাতায় থাকায় অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে যেতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ঠিক নয়।” আরও দু’জন অতিথির মধ্যে এক কংগ্রেসের বিধায়ক কেশব রায় আরেকজন প্রাক্তন বিধায়ক কংগ্রেস নেতা ফজলে হক। রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, বিষয়টি প্রয়োজনে রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে।
আগামী ৮ মার্চ দিনহাটার ওকরাবাড়ি হাইস্কুলে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে দিনহাটা শহরে তোরণ তৈরি করা হয়েছে। ওই সংগঠনের কোচবিহার জেলা সভাপতি শিশির সরকার অবশ্য দাবি করেছেন, ওই সংগঠন কোনও রাজনৈতিক দলের সংগঠন নয়। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন হিসেবে তাদের সঙ্গে তৃণমূল ও কংগ্রেস নেতারা যুক্ত রয়েছেন।
২০০৯ সালে কোচবিহারে সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল নেতা উপস্থিত ছিলেন। ২০১১ সালে রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এবারেও সিঙ্গুরে রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তৃণমূলের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বিভিন্ন জেলায় সংগঠনের সম্মেলনে তৃণমূল নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “ওই সংগঠন কংগ্রেস প্রভাবিত শিক্ষকদের। তাঁর তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের কোনও যোগ নেই। সেই সংগঠনের জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনে কেন মন্ত্রী-সাংসদরা যাবেন, তা তাঁরাই বলতে পারবেন।” কংগ্রেসের বিধায়ক কেশব রায় বলেন, “জাতীয়তাবাদী ওই শিক্ষক সংগঠনে বরাবর কংগ্রেস মনোভাবাপন্নদের। তবে সংগঠনের সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী সকলকেই ডাকা হয়। এর মধ্যে রাজনীতি করা ঠিক নয়।”