স্থানীয় বিবেকানন্দ ক্লাবের পরিচালনায় শুরু হয়েছে পুজো। ছবি: বাপি মজুমদার।
দুর্গোৎসবের আনন্দ ফিকে হতে না হতেই দেবী তারার পুজো ও উৎসবকে ঘিরে মেতে ওঠেন মালদহের গাজলের বাসিন্দারা। তাই দেবী দুর্গার বিসর্জনের পর সর্বত্রই যখন বিষাদের সুর তখন সোমবার সকাল থেকে ফের পুজোর আমেজ ফিরেছে গাজল শহরে। গাজলের এই উৎসব ছাপিয়ে যায় শারদোৎসবের আড়ম্বরকেও। ১২ দিন ধরে চলে এই উৎসব। এবার এই উৎসব ২৯ বছরে পড়ল। পুজো হয় স্থায়ী মন্দিরে। মন্দিরে রয়েছে অষ্টধাতুর তৈরি দেবী তারার মূর্তি। লক্ষ্মীপুজোর আগের রাতে চতুর্দশী তিথিতে ওই পুজো হয়। রয়েছে পশু বলির প্রথাও। সোমবার রাতে পুজোর পর মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে উৎসব। স্থানীয় বিবেকানন্দ ক্লাবের পরিচালনায় ওই পুজো হয়। উদ্যোক্তাদের দাবি শুধু মালদহেই নয়, এই পুজোকে ঘিরে উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম বড় উৎসব হয় গাজলে। আর ১২ দিনের ওই উৎসবে মালদহ ছাড়াও দুই দিনাজপুরের দর্শনার্থীদেরও ঢল নামে গাজল শহরে।
তারাপীঠে পুজো দেখে এসে ২৯ বছর আগে গাজলে ওই পুজো শুরু করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাপীঠ মন্দিরেও ওই পুজো হয় লক্ষ্মীপুজোর আগের রাতে চতুর্দশী তিথিতে। তবে তারাপীঠের মন্দিরের অনুকরণে গাজলে শুধু পুজোই। বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ১২ দিন ধরে চলা উৎসব। পুরনো রীতি মেনে মন্দির পরিস্কার করা হয় এলাকার প্রাচীন দিঘি হিসেবে পরিচিত কালিদিঘির জল দিয়ে। মহাধুমধামে সেই দিঘি থেকে জল নিয়ে আসা হয় শোভাযাত্রা করে। যার পোষাকি নাম কলস যাত্রা সোমবার সেই কলসযাত্রা দিয়েই সূচনা হয়েছে উৎসবের। ১০৮ জন মহিলা কলসি মাথায় নিয়ে কালি দিঘি থেকে জল নিয়ে আসেন। ঢাকঢোল নিয়ে কয়েকশ বাসিন্দাও সেই শোভাযাত্রায় সামিল হন।
পুজোর খরচের একটা অংশ খরচ করা হয় দুঃস্থ মানুষদের জন্যও। এবার দু’হাজার দুঃস্থ বাসিন্দাকে বস্ত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। উৎসব প্রাঙ্গনে বাউল, ভাওয়াইয়া, শ্যামা সঙ্গীত, বাঁকুড়ার লোকগীতি সহ নানা অনুষ্ঠান চলে। এ ছাড়া এলাকাটি আদিবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় আদিবাসী নাচগানেরও ব্যবস্থা করা হয়। বিবেকানন্দ ক্লাবের সম্পাদক রণদা কুমার সরকার বলেন, “দুর্গোৎসবের মতোই এই পুজো গাজলের বাসিন্দাদের কাছে সমান আকর্ষণীয়। বরং পুজো শেষের বিষাদ ভুলিয়ে দেয় বলেই এই উৎসব অন্য মাত্রা পেয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা পঙ্কজ ঘোষ, বিজিত দাসরা বলেন, “দুর্গাপুজোর পাশাপাশি আমরা সারা বছর এই পুজো ও উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকি।’’