শিলিগুড়ি কার্নিভালের অংশ বলে ঘোষণা করে ‘কিডস ও ফেস্ট’ উত্সবে শিশুদের দিয়ে কাজ করানো নিয়ে শহর জুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। ক্ষুব্ধ শহরবাসীদের কয়েকজন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে শহরের দাগাপুরের একটি বিনোদন পার্কে ওই শিশু উত্সব শুরু হয়েছে। উদ্বোধনে কার্নিভাল কমিটির সদস্যরাও ছিলেন।
উত্সবে শিশুদের নিয়ে যাওয়া অভিভাবকেরা দেখতে পান, ছোট্ট ছোট্ট ছেলেদের পোশাক পড়িয়ে উত্সবের নিরাপত্তার কাজ করানো হচ্ছে। শুধু তাই, ঠান্ডার মধ্যে একই রঙের হলুদ গেঞ্জি গায়ে বালকদের দিয়েই সাফাই-র কাজও করানো হচ্ছে। বিষয়টি ধীরে ধীরে শহর জুড়ে চাউর হতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শিশুদের দিয়ে শিশু উত্সবে কাজের সমালোচনায় সরব হয়েছেন অনেকেই। দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এড ফোরামের পক্ষ থেকে বিষয়টি জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনে জানানোর কথা রাতেই জানিয়েছেন সংগঠনের সম্পাদক অমিত সরকার।
শিলিগুড়ি শহরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মারাত্মক ঘটনা। পুরোপুরি অমানবিক কাজ করা হয়েছে। মানবাধিকার, শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। উত্সবের দায়িত্বে থাকা সংস্থা শুধু নয়, কার্নিভাল কমিটি এর দায় এড়াতে পারে না। আমরা বিষয়টি দেখছি।” অশোকবাবু জানান, আর্থিক অনটনে থাকা পরিবার থেকে কুলি, দোকানের কর্মী হিসাবে শিশুদের অনেক সময়ই উদ্ধার করা হয়। কিন্তু উত্সবের শিশু শ্রমিক ভাবাই যায় না।
গোটা ঘটনাকে শিলিগুড়ি শহরের লজ্জা বলে জানিয়েছেন বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার। শঙ্করবাবু বলেন, “উত্সবের নামে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ, শহরের লজ্জা এটা। আসলে কার্নিভালের নামা মন্ত্রী, নেতাদের উদ্ধত্য এতটাই বেড়েছে যে কী করেছেন তা খেয়াল রাখছেন না। একাংশ সরকারি অফিসার শাসক দলের শাখা সংগঠনে নাম লিখিয়েছেন। তাঁদের হাতে শিশুরাও সুরক্ষিত নয়।”
শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং শিশু শ্রমিকদের উদ্ধারের কাজ করে ‘চাইল্ড লাইন’। শিলিগুড়িতে চাইল্ড লাইন দেখভাল করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সিনি’। ঘটনা হল, ‘সিনি’ও শিলিগুড়ি কার্নিভালের সহযোগী সংস্থা। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অভিযোগ, যে সংস্থা চাইল্ড লাইনের দেখভাল করে, তাঁরাই কার্নিভালে যুক্ত থাকায় কিডস ও ফেস্টের উদ্যোক্তারা শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর সাহস পেয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় শিশু শ্রমিকদের কাজে লাগানোর অভিযোগ ওঠার পরেও চাইল্ড লাইনের তরফে পদক্ষেপ করতে রাত হয়ে যায়। এই দেরির কারণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সিনি-র শিলিগুড়ির আহ্বায়ক শেখর চক্রবর্তী জানান, চাইল্ড লাইন কার্নিভালের সঙ্গে যুক্ত নয়। শিশু উত্সবে শিশু শ্রমিকদের কাজ করানোর ঘটনা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। ঘটনার খবর রাতে পেয়েছি। রাতের বেলায় অভিযান চালানোর পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় কিছুটা দেরি হয়েছে। পরে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে।
উত্তরবঙ্গের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সমাজকর্মী সুব্রত সরকার। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি নজরদারি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, “কিছু হোটেল বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে লুকিয়ে চুরিয়ে শিশু শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মী বা সাফাই কর্মীর মতো কাজে প্রকাশ্যে শিশু শ্রমিকের ব্যবহার হতে পারে, এমনটা কল্পনা করতে পারেনি। দ্রুত আইন মেনে ব্যবস্থা নিতে হবে।”