শহরের স্বস্তিতে কাঁটা জাতীয় সড়ক

ইসলামপুরে একটু অসতর্ক হলেই বিপদ। কারণ, শহরের মাঝ বরাবর গিয়েছে সেই জাতীয় সড়ক। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যাতায়াত করতে ওই জাতীয় সড়ক পেরোতে হয়। এক দোকান থেকে অন্য দোকানে যেতেও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পারাপার করা ছাড়া উপায় নেই। ইসলামপুরের বঙ্গভুক্তির পরে প্রায় ৬ দশক হতে চলেছে। আজও নিরাপদে রাস্তা পারাপারের কোনও বন্দোবস্ত হয়নি।

Advertisement

কিশোর সাহা

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৪
Share:

ইসলামপুরে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

ইসলামপুরে একটু অসতর্ক হলেই বিপদ। কারণ, শহরের মাঝ বরাবর গিয়েছে সেই জাতীয় সড়ক। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যাতায়াত করতে ওই জাতীয় সড়ক পেরোতে হয়। এক দোকান থেকে অন্য দোকানে যেতেও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পারাপার করা ছাড়া উপায় নেই। ইসলামপুরের বঙ্গভুক্তির পরে প্রায় ৬ দশক হতে চলেছে। আজও নিরাপদে রাস্তা পারাপারের কোনও বন্দোবস্ত হয়নি। একটা ওভার ব্রিজ কিংবা একাধিক বড় মাপের ফুট ওভার ব্রিজ কিন্তু এলাকার চেহারাটাই পাল্টে দিতে পারত। উত্তরবঙ্গের আর পাঁচটা শহরের তুলনায় অনেক আধুনিক হয়ে উঠতে পারত ইসলামপুর। তা হয়নি।

Advertisement

তবে ইসলামপুরে ট্রাফিক সিগন্যাল চালুর চেষ্টা হয়েছিল। বহু লক্ষ টাকা খরচ করে শহরের নানা জায়গায় বসানো হয়েছিল ট্রাফিক সিগন্যাল। নজরদারি করতে ক্লোজড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) বসানো হয়েছিল অনেক। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বসানো সব সিসিটিভি বিকল হয়ে রয়েছে। যে ঠিকাদার সংস্থা ওই সিসিটিভি বসিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা কেন হচ্ছে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামপুরের বাসিন্দারা। এলাকার কংগ্রেস ও বাম নেতা-কর্মীদের অনেকেরই অভিযোগ, নেতা-কর্তাদের একাংশের যোগসাজসেই সিসিটিভি বসানোর নামে সরকারি টাকা নয়ছয় হয়েছে। উপরন্তু, ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হওয়া তো দূরের কথা, অনেক ট্রাফিক পোস্ট সিগন্যাল সহ ভেঙে পড়ে রয়েছে জাতীয় সড়কের ধারে। যা কি না বাসিন্দাদের নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছিল, সেটাই এখন উপড়ে গিয়ে চলাফেরায় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর বক্তব্য, “ইসলামপুরের ট্রাফিক সিগন্যালের বিষয়টি জানি। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।”

সরকারি কর্তাদের একাংশের এমন ‘দেখছি-দেখব’ মনোভাবে অবশ্য হতাশ নয় ইসলামপুর। বরং চার লেনের মহাসড়ক শহরের মূল এলাকা ছেড়ে বাইপাস হয়ে চলে যাবে ভেবেই অনেকে আশ্বস্ত। কারণ, তাতে শহরের ওই জাতীয় সড়কে যানবাহনের চাপ অনেক কমে যাবে। কিন্তু জমি জট ছাড়িয়ে সেই বাইপাস কবে সম্পূর্ণ হবে তা কিন্তু ঠিকঠাক ভাবে সরকারি তরফে কেউ জানাতে পারেননি। তাই স্কুল পড়ুয়া শবনম, রিজিয়া, বিপুল, সুদর্শনরা ঝুঁকি নিয়েই রোজ রাস্তা পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছে। অভিভাবকদের তরফে অনেকেরই প্রশ্ন, যেখানে নানা উৎসবের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে সরকার ইচ্ছে করলে একটা ‘ফুট ওভার’ ব্রিজ করতেই পারে না?

Advertisement

জাতীয় সড়ক সংক্রান্ত যে সব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছে ইসলামপুর পথি পার্শ্বস্থ ব্যবসায়ী সমিতি। শহরের মিলনপল্লি থেকে তিস্তা মোড় পর্যন্ত এলাকা, রাস্তার ধারের প্রায় সব ব্যবসায়ীই ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। রোজই ব্যবসায়ীরা জাতীয় সড়ক সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন। উপরন্তু, ব্যবসায়ীদের একাংশ দোকানের সামনেও জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখায় সেই সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে। রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে নিত্যযাত্রী, ক্রেতারা আরও বেশি মুশকিলে পড়ে যান। ওই ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুভাষ চক্রবর্তী বলেন, “জাতীয় সড়ক পারাপারে সমস্যা তো আছেই। তবে বাইপাস হয়ে গেলে সমস্যাটা কমবে। যতদিন তা না হয়, সাবধানে থাকতেই হবে। রাস্তার ধারের ব্যবসায়ীরা যাতে দোকানের সামনে জিনিসপত্র সাজিয়ে চলাচলের জায়গায় সঙ্কুচিত না করেন, সে জন্য নিয়মিত প্রচার চালাই। তবুও সমস্যা মেটে না। এটা একদিনে মেটার নয়। তবে ফুট ওভারব্রিজ হলে ভালই তো হবে।”

বস্তুত, ফুট ওভারব্রিজ শুধু নয়। ইসলামপুরের অনেক অভাবই দূর করতে সরকারি তরফে উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বাসিন্দাদের অনেকেই। অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলার শিকার যেন বিহার ঘেঁষা ছোট্ট শহর। যেমন, বহুবার আবেদনের পরেও ইসলামপুরে একটা মহিলা কলেজ হয়নি। কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক সব দলের লোকজনই একবাক্যে স্বীকার করেন, ‘ইসলামপুরে মেয়েদের জন্য আলাদা একটা কলেজ হওয়া সত্যিই ভীষণ জরুরি।’ অথচ বামেরা প্রায় সাড়ে ৩ দশকে মহিলা কলেজে করতে পারেননি। একইভাবে চাহিদা থাকলেও আজও পলিটেকনিক কলেজ হয়নি। আইটিআই-এর মতো কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানও নেই ইসলামপুরে। শিক্ষার্থীদের গন্তব্য হয় বিহারের কিসানগঞ্জ না হলে শিলিগুড়ি। বিএড কলেজ, পিটিটিআইয়ের মতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও হয়নি ইসলামপুরে।

ইসলামপুরের পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরলে শোনা যায় আরও অভিযোগ। নেই-এর তালিকা আরও দীর্ঘ হয়ে যায়। যেমন, পাড়ার অধিকাংশ রাস্তাই বেহাল। হাট-বাজারে যাতায়াতের পথের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই শোচনীয়। নিকাশির সুষ্ঠু ব্যবস্থা হয়নি বলে এখনও রামকৃষ্ণপল্লির মতো অনেক এলাকা বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে যায়। ইসলামপুর পুরসভার মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১৭। প্রতিটি ওয়ার্ডেই নিকাশি প্রায় বেহাল।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর আবেদা খাতুন বলেন, “রবীন্দ্রনগর পল্লির শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে না শিশুরা। বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় জলকাদায় চলাফেরা করা যায় না। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর মুজফফর হোসেন জানান, প্রতিটি এলাকায় নিকাশির সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে সমস্যা রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম এর প্রাক্তন কাউন্সিলার মহম্মদ করিম বলেন, “আরও কয়েকটি রাস্তা হওয়া দরকার। এলাকায় ২টি রাস্তার অনুমোদন হলেও এখনও পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি পুরসভা। পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই।”

কী বলছেন প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রীরা? লাগোয়া চোপড়া বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী আনোয়ারুল হক বলেন, “আমাদের সময় ইসলামপুরের আইটিআই কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ইসলামপুরের কলেজ মাঠে। কাজ সম্পূর্ণ হয়নি বলে পড়াশোনা চালু করা যায়নি। এখনও একই অবস্থায় রয়েছে।” ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন, “ইসলামপুরে আইটিআই শুরু হয়েছে। ইসলামপুর কলেজ মাঠে ৩ মাসের ভোকেশনাল ক্লাস শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই সব ক্লাস শুরু হবে। শহরে পলিটেকনিক কলেজের কাজ শুরু হয়েছে। তবে মহিলা কলেজ করার প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে লিখিত ভাবেও জমা দিয়েছি।”

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন