এই স্টেশনের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ স্থানীয়দের। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হলদিবাড়ি স্টেশনের উন্নতির জন্য বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও তা উপেক্ষিত। এই দাবির সমর্থনে রাজনৈতিক দলগুলি সোচ্চার হয়েছে। কখনও স্টেশন মাস্টারের মাধ্যমে, কখনও রেলের বিভগীয় আধিকারিকের কাছে দাবির সমর্থনে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। দাবিপত্র পাঠানো হয় রেলমন্ত্রীর কাছেও। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শতাব্দী প্রাচীন, ১৮৭৬ সালে স্থাপিত এই স্টেশনটির উন্নতির বদলে অবনতি হয়েছে। তিনটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হত। এখন একটি মাত্র প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়। প্ল্যাটফর্মটি উঁচু করা হলেও লম্বায় একই আছে। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে বাইরে চলে যায়। একটি মাত্র রেলগেট আছে। তা বন্ধ হয়ে গেলে শহরের দুটি অংশের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্টেশনে কোন শৌচাগার নেই।
এই সমস্ত পরিষেবা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে একটি মেল ট্রেন (পদাতিক এক্সপ্রেস) হলদিবাড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা। পুরানো প্ল্যাটফর্মগুলি সক্রিয় করে ওভারব্রিজ তৈরি করা হোক। হলদিবাড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ নাগ বলেন, “স্টেশন থেকে মাসে ১৮ লক্ষ টাকা টিকিট বিক্রি বাবদ রেলের আয় হয়। তাও হলদিবাড়ি স্টেশনের যাত্রীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য রেলের উদ্যোগ চোখে পড়ে না।” তিনি জানান, বেলাকোবা, আমবাড়ি-ফালাকাটা স্টেশনেরও উন্নতি হচ্ছে।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলে এনজেপি-র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীল বলেন, “হলদিবাড়ি স্টেশনে যাত্রী গাড়িগুলিতে খুবই কম সংখ্যক যাত্রী টিকিট কাটেন। গাড়ি চালাতে রেলের আয়ের বদলে ক্ষতি হয়। বেলাকোবা, আমবাড়ি কিংবা ফালাকাটা স্টেশনে হলদিবাড়ি থেকে অনেক বেশি যাত্রী টিকিট কাটেন।” তিনি জানান, একটি স্টেশনের উন্নতির জন্যে অন্য বিষয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় কত জন যাত্রী টিকিট কাটছেন। যাত্রীরা সবাই টিকিট কাটলেই পরিষেবা উন্নত করা হবে।
হলদিবাড়ি স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিট সংরক্ষণ বাবদ ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে প্যাসেঞ্জার ট্রেন টিকিট বিক্রির পরিমাণ খুবই কম। হলদিবাড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে মোট তিন জোড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করে। দুটি এক্সপ্রেস ট্রেন হলদিবাড়ি-কলকাতা যাতায়াত করে। তার মধ্যে একটি দৈনিক এবং একটি সপ্তাহে তিন দিন চলাচল করে। তিন জোড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেনে প্রতিটিতে ১২টি কামরা থাকে। প্রতিটি কামরায় ১০৮ জন বসে যেতে পারেন। প্রতিটি ট্রেনে ১২৯৬ জন যাত্রী যেতে পারেন। সেখানে হলদিবাড়ি স্টেশন থেকে মাত্র ১০০-১২০ জন যাত্রী প্রতিটি ট্রেনে টিকিট কেটে ওঠেন। হলদিবাড়ি থেকে কোনও মালগাড়ি চলে না। তাই পণ্য পরিবহণ বাবদ রেলের আয় হয় না। রেলের এক আধিকারিক বলেন, জন সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সব স্টেশনে টিকিট বিক্রি হার বাড়লেও হলদিবাড়ি স্টেশনে টিকিট বিক্রির হার তুলনায় কমেছে।