সুপারিশে ভর্তি চাই, মাথায় বোতল ভাঙলেন ছাত্রনেতা

তাঁর সুপারিশে ছাত্রদের কলেজে ভর্তি নিতে হবে, এই দাবি করে নিজের মাথায় বিয়ারের বোতল ভাঙার চেষ্টা করলেন কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা এক তৃণমূল ছাত্রনেতা। তাঁর অবশ্য দাবি, ভর্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ’ করতেই তিনি এ কাজ করেছেন। সোমবার বেলা আড়াইটে নাগাদ শিলিগুড়ি কলেজে ঘটনাটি ঘটেছে। আহত ছাত্রের নাম প্রসেনজিত্‌ মণ্ডল। তাঁর বাড়ি অরবিন্দপল্লি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৪
Share:

আহত প্রসেনজিত্‌। নিজস্ব চিত্র।

তাঁর সুপারিশে ছাত্রদের কলেজে ভর্তি নিতে হবে, এই দাবি করে নিজের মাথায় বিয়ারের বোতল ভাঙার চেষ্টা করলেন কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা এক তৃণমূল ছাত্রনেতা। তাঁর অবশ্য দাবি, ভর্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ’ করতেই তিনি এ কাজ করেছেন।

Advertisement

সোমবার বেলা আড়াইটে নাগাদ শিলিগুড়ি কলেজে ঘটনাটি ঘটেছে। আহত ছাত্রের নাম প্রসেনজিত্‌ মণ্ডল। তাঁর বাড়ি অরবিন্দপল্লি। তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রসেনজিতের অভিযোগ, “ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। আমাদের ছাত্র সংগঠনের অন্যরা সুপারিশ করে পড়ুয়াদের ভর্তি করিয়েছেন। আমি বললে পড়ুয়াদের ফেরানো হচ্ছে।”

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উজ্জ্বলচন্দ্র সরকার জানান, তাঁর ঘরে গিয়ে ওই ছাত্র ৪৫ শতাংশের নীচে নম্বর পাওয়া ৯ জন পড়ুয়ার ভর্তির ব্যবস্থা করতে বলেন। সেই সময়ে বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে দফতরে বৈঠক করছিলেন তিনি। তাঁরা তাকে আধঘণ্টা পরে আসতে বলেন। কিন্তু তিনি তা না শুনে নিজেই লিখে আনা একটি চিঠিতে অধ্যক্ষকে সই করে সুপারিশ করতে বলেন। ছাত্রনেতা দাবি করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়ম ভেঙে মেধা তালিকার বাইরেও পড়ুয়াদের ভর্তি করিয়েছেন। অথচ ওই ন’জনের ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

Advertisement

অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের একাংশ জানান, তাঁরা চিঠি না পড়ায় ওই নেতা সকলকে শুনিয়ে তা পড়তে শুরু করেন। তাতে লেখা ছিল, মহকুমাশাসকের দফতর থেকে পড়ুয়াদের ভর্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও তা করা হয়নি। ওই নেতা দাবি করেন, নম্বর কম থাকলেও কয়েক জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে তা করা না হলে আত্মহত্যার হুমকি দেন। এও বলেন, তাঁর আত্মহত্যার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত কমিটির আহ্বায়ক, এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়ী থাকবেন কর্তৃপক্ষ তা করতে না চাইলে ওই নেতা অধ্যক্ষের ঘরের বাইরে গিয়ে ব্যাগ থেকে তিনটি বিয়ারের বোতল বার করে নিজের মাথায় আঘাত করেন। চার দিকে বোতলের কাচ ছড়িয়ে পড়ে। কলেজে যায় পুলিশ।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “দুর্নীতির কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এলে খতিয়ে দেখব। ৮ অগস্ট ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ওই পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও শেষ। ওই ছাত্র নিজেও ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর জানা উচিত, এখন কারও ভর্তি সম্ভব নয়। ওই ৯ জন ছাত্র কখনও আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তাছাড়া মহকুমাশাসক তাদের ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে জানানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তবেই তা সম্ভব।” তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে সব কিছু জানানো হয়নি। বর্তমানে কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল পালের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি জানান, এ ধরনের কোনও ছাত্রকে ভর্তির জন্য আবেদন করছেন না তাঁরা। তাদের কেউ জানায়নি।

এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস বলেন, “ওই ছাত্র নেতা টাকা নিয়ে ভর্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে শুনেছি। ঘটনা খতিয়ে দেখা দরকার।” টিএমসিপির জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় বা তমাল পালের দাবি, “দুর্নীতির ব্যাপারে ওই ছাত্র মনগড়া কথা বলছেন। তিনি কোনও আতঙ্কে ভুগছেন কি না জানা নেই। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ওই ছাত্র নেতা কোনও যোগাযোগ করেননি। প্রায় পাঁচ মাস বাদে এখন ভর্তি করানো সম্ভব নয়। যে পড়ুয়ারা কোনও কলেজে ভর্তি হতে পারেননি, তাঁদের ভর্তির ব্যবস্থা করতে আমরাও উদ্যোগী ছিলাম। এই ন’জনের কেউই কিছু জানায়নি।” মৃদুল জানান, এই ঘটনা তাঁরা সমর্থন করেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন