সব থেকেও পর্যটন মানচিত্রে ব্রাত্য

শীতের মরসুম শুরু হতেই পাহাড়, জঙ্গলের আকর্ষণে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মালদহ পর্যটকশূন্য। শুধু এ বার নয়, প্রতি বছরই ছবিটা একই থেকে যায়।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৭
Share:

পাণ্ডুয়ায় ঐতিহ্যশালী ইমারত চত্বরে গজিয়ে উঠেছে দোকান। নিজস্ব চিত্র।

শীতের মরসুম শুরু হতেই পাহাড়, জঙ্গলের আকর্ষণে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মালদহ পর্যটকশূন্য।

Advertisement

শুধু এ বার নয়, প্রতি বছরই ছবিটা একই থেকে যায়। এমনটাই জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কোনও আমলেই মালদহের পর্যটন নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। মালদহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা হয়নি। তাই উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতে পর্যটকের ঢল নামলেও ব্রাত্যই থেকে যাচ্ছে মালদহ। বঞ্চিত হচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরাও। জেলার ইতিহাসবিদ কমল বসাকের মতে, অন্য জেলার মতো মালদহ জেলাও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। এর জন্য দরকার পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ‘‘জেলাতে গৌড়, আদিনার মতো একাধিক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। কিন্তু সেগুলি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। পর্যটকদের জন্য কোনও পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়নি। এ বিষয়গুলিতে নজর দিলে এই জেলাও পর্যটন মানচিত্রে ভাল ভাবেই
জায়গা পাবে।’’

জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান ঐতিহাসিক স্থান। ইংরেজবাজার শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে গৌড়। মহদিপুর সীমান্তের পাশে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে গৌড়ের ধ্বংসস্তুপ। বড়ো সোনা মসজিদ, লোটন মসজিদ, লুকোচুরি দরওয়াজা, তাঁতি পাড়া মসজিদ, ফিরোজ মিনার, গুমটি গেট, রাজবাড়ির ধ্বংসস্তুপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রয়েছে রামকেলি মন্দির। কথিত রয়েছে, এখানে এসেছিলেন মহাপ্রভু চৈতন্য দেব। একটি পাথরের উপর তাঁর পায়ের চিহ্নও রয়েছে। যা দেখার জন্য জৈষ্ঠ্য মাসে ভিন রাজ্য থেকেও প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।

Advertisement

গৌড়ের মতো আদিনা মসজিদও জেলার ঐতিহ্য বহন করে। শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দুরে গাজলের পান্ডুয়ায় এই মসজিদটি অবস্থিত। এই দুই ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র ছাড়াও মালদহ শহর থেকে একটু দূরে হবিবপুর ব্লকের জগজীবনপুরে রয়েছে বৌদ্ধ বিহার। এখানে বৌদ্ধদের তুলসী ভিটে রয়েছে। মাটি খনন করে এই তুলসী ভিটেটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। তবে এই কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠেনি কোনও পর্যটন কেন্দ্র।

শুধু তাই নয় বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী এলাকায় রয়েছে উইলিয়াম কেরির নীলকুঠি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মদনাবতীতেই রয়েছে প্রাচীন শিব মন্দির। দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি করলেও হয়নি কিছুই। ঐতিহাসিক স্থানগুলি নিয়ে যেমন বিশেষ কিছু ভাবা হয়নি, তেমনই শহরের মধ্যে মনোরম পরিবেশ থাকলেও তাকে ঘিরেও কোনও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি মালদহে।

আদিনা মসজিদের মাত্র ৫০০ মিটার দুরে রয়েছে আদিনা ডিয়ার পার্ক। হরিণ দেখার পাশাপাশি পরিযায়ী পাখি,বানর, বিরল প্রজাতির সাপ, নীল গাই প্রভৃতি দেখা যায়। জঙ্গলও রয়েছে এখানে। এছাড়া ইংরেজবাজারে রয়েছে জহুরাতলা মন্দির। এই মন্দির দর্শনের জন্য কম বেশি সারা বছরই মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।

ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদহ শহরের মাঝে বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী। সারা বছরই জল থাকে নদীতে। ইংরেজবাজারের মাধবনগরে এলাকায় এক কিলোমিটার অংশ জুড়ে নদীর পাড় বাঁধিয়ে সাজানো হলেও সর্বত্রই তা করা হয়নি। স্কুল শিক্ষক অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘‘শহর এখন কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। নির্জনতা খুঁজে পাওয়া দায়। শহরকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুললে একঘেয়ে জীবন যাপন থেকে যেমন রেহাই মিলবে তেমনই পর্যটনের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন