যাত্রীশেডের হাল এমনই। জলপাইগুড়িতে। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরসভা এবং পুলিশের সমন্বয়ের অভাবেই জলপাইগুড়ি শহরে যানজট কমছে না বলে অভিযোগ তুললেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, পুরসভার অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত যাত্রী শেড এবং বাসস্ট্যান্ডে বাস দাঁড়ায় না। কোথাও আবার যাত্রী তোলার বাস জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন স্টপে গিয়ে বাস বিধির তোয়াক্কা না করে মালপত্র তোলে। ফলে যানজট তৈরি হয়। অন্য দিকে পুরসভার দাবি, সমস্যার কারণ পুলিশের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার তরফে এখনও পর্যন্ত জলপাইগুড়ি শহরে কোনও বাসস্টপ তৈরি হয়নি। তিনটি যাত্রী শেড বানানো হয়েছিল। তার মধ্যে শুধু বাবুপাড়ার শেডটি ব্যবহার হয়। জলপাইগুড়ি হাসপাতালের পরে ডুয়ার্সগামী বাস দাঁড়ানোর জন্য আরেকটি যাত্রীশেড রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে না দাঁড়িয়ে দিনবাজার সংলগ্ন এলাকায় ডুয়ার্সগামী এবং ডুয়ার্স থেকে জলপাইগুড়িগামী সমস্ত বাস দাঁড়ায়। এলাকায় ডিভাইডার না থাকায় দুই রুটের বাস পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে ওই রাস্তায় পথচারীদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ডুয়ার্সগামী বাসে এখান থেকে মালও তোলা হয় এবং মিনিবাসগুলিও এখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
ওই এলাকার কাছেই হাসপাতাল রয়েছে বলে সমস্ত অ্যাম্বুল্যান্সও এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। মাঝে মধ্যেই যানজটে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে পড়ে। জেলা প্রশাসনিক কার্য্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাও এটি। ফলে জলপাইগুড়িতে যাতায়াত করতে হলে প্রশাসনিক কর্তা থেকে মন্ত্রী, সকলের এই রাস্তাই ভরসা। স্থানীয় এক বাসিন্দা দাবি করেন, “ওঁদের জন্য অবশ্য পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে যাতায়াতের সময় এঁরা বুঝতে পারেন না, পথচলতি সাধারণ মানুষ কতটা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।”
প্রসঙ্গত, জলপাইগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাটি প্রায় বাস টার্মিনাসে পরিণত হয়েছে বলে বাসিন্দাদর অভিযোগ। সেখানে মিনি বাসগুলির গন্তব্য শেষ হয়। সমস্ত মিনি বাস সার দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। একই রাস্তার উল্টো দিকে ডুয়ার্স থেকে আসা বাসগুলি দাঁড়ায়। পাহাড়পুর থেকে আসা অটোরিক্সাগুলিও সেখানেই যাত্রা শেষ করে বা ফিরতি পথের যাত্রীদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। স্টেশনে ট্রেন এসে দাঁড়ানোর পর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। স্টেশনে ঢোকার রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যাঁরা ট্রেন ধরতে আসেন, তাঁরা অসুবিধায় পড়েন। স্টেশনে ঢোকার রাস্তায় জ্যাম হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ট্রেন ধরতে পারেন না। জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি নিত্যযাত্রী সমিতির সম্পাদক গোপাল পোদ্দার বলেন, “স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় যানজটের কারণে যাত্রীরা অনেক সময়ে ট্রেন ধরতে পারেন না। সমস্যার কথা পুরসভার চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। এই অবস্থা শুধু দিনবাজার সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এবং স্টেশন এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। কদমতলা, বেগুনটারি সব জায়গায় এক সমস্যা।”
এ বিষয়ে পুরসভা অবশ্য সরাসরি দোষ চাপিয়েছে পুলিশের ওপর। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শহরের মধ্যে কোনও স্টপে বাস দু’মিনিটের বেশি দাঁড়ানোর নিয়ম নেই। কোথাও বাস অবৈধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না বা স্টপে দাঁড়িয়ে মাল তুলতে পারে না। পুরসভার তৈরি যাত্রী শেডের সামনেই বাস দাঁড়ানো উচিত। এ সবই দেখার দায়িত্ব পুলিশের।” জলপাইগুড়িতে ট্র্যাফিক আইন খুব কড়া ভাবে প্রয়োগ করা হয় না, এ কথা জানিয়েছেন ওসি সৈকত ভদ্র। তিনি বলেন, “সমস্যাগুলি নিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”