সরকার নির্ধারিত হারে ছাত্রদের কাছ থেকে ফি নেওয়ার জন্য শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিল রাজ্য শিক্ষা দফতর।
বৃহস্পতিবার রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে পাঠানো ওই নির্দেশিকা জেলাশাসক হিন্দি হাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন। সরকারি ভাবে যেখানে ২৪০ টাকা ভর্তির ফি সেখানে কোনও ক্লাসে ৪ হাজার ৮০০ টাকা, কোনও ক্লাসে ২০০০ টাকা ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না, নতুন ক্লাসে ছাত্রদের নথিভুক্তকরণ হয়নি, স্কুলের একাংশ ঘর তালা মেরে রাখা হয়েছে অভিযোগ তুলে বুধবার দেড় ঘন্টা বর্ধমান রোডের উপর জলপাইমোড় অবরোধ করেছিলেন ছাত্র-অভিভাবকদের একাংশ। পুলিশ প্রশাসনের তরফে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তোলা হয়।
ওই দিন দুপুরে সমস্যা নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ দাস অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র এবং অভিভাবকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। স্কুল পরিদর্শকের দফতরের দুই প্রতিনিধিও ছিলেন। বৈঠকের আলোচনার পুরো বিষয়টি স্কুল শিক্ষা দফতরে জানানো হয়। এর পরেই এ দিন জেলাশাসকের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই নির্দেশিকা পাঠায় শিক্ষা দফতর।
এ দিন দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনিত যাদবের কাছ থেকে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, সরকারি ভাবে যে ফি নেওয়ার কথা তার বাইরে আর কোনও ধরনের ফি যেন ছাত্রদের কাছ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ না নেন রাজ্য শিক্ষা দফতর তা জানিয়েছে। সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
তবে স্কুলটি যে সোসাইটির অধীনে বলে দাবি করা হয় তার সদস্য সীতারাম ডালমিয়া বলেন, “স্কুলটি বেসরকারি এবং ভাষাগত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তা ছাড়া সমস্যা নিয়ে মামলা চলছে। ২৯ জানুয়ারি শুনানি রয়েছে। তাই জেলাশাসকের তরফে পাঠানো ওই নির্দেশিকা আমরা কী করে লাগু করব?” ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, স্কুল শিক্ষা দফতরের যে নির্দেশিকা জেলাশাসকের দফতর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছিল এ দিন তা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার অবরোধের পর পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্কুলের যে ঘরগুলি তালা দিয়ে রাখা হয়েছিল তা খুলে দেওয়া হয়। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া না হলেও প্রার্থী ছাত্ররা এ দিন ক্লাসে বসেছিলেন। অভিভাবকেরা জানান, ভর্তির জন্যই ছাত্ররা গিয়েছিল। স্কুলের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, সমস্যা মেটাতে গত ৭ জানুয়ারি স্কুলে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেছিল স্কুল পরিদর্শকের দফতর। কিন্তু সোসাইটির তরফে তাকে কড়াভাবে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের তরফে অপর এক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই অবস্থায় কোনও গোলমাল এবং আর্থিক নয়ছয় ঘটলে তার দায় স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে করা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকেই নিতে হবে। এর পর থেকেই ওই শিক্ষক অসুস্থার কারণে ছুটিতে রয়েছেন বলে স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ জানিয়েছেন। অন্য দিকে স্কুলের দুই অস্থায়ী আংশিক সময়ের শিক্ষককে স্কুলের এক সদস্যের পরিচালন কমিটির একমাত্র সদস্য ভগবতী প্রসাদ ডালমিয়া চিঠি দিয়ে তাদের আর আসতে নিষেধ করেছেন। ১০ বছর ধরে ওই দুই শিক্ষক চাকরি করছিলেন। তারা ভগবতীবাবুদের পক্ষে না থাকার জন্যই তাদের সরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এ ব্যাপারে সীতারামবাবু কিছু বলতে চাননি।
অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, “ভাষাগত ভাবে সংখ্যালঘু স্কুল বলে পরিচালন কমিটি প্রশাসনের কাছে কখনও কোনও শংসাপত্র দেখাতে পারেনি। সরকারি ওই নির্দেশিকা আসায় ছাত্ররা উপকৃত হবেন। আশাকরি এ বার এই নিয়ম মেনেই দ্রুত ভর্তির ব্যবস্থা হবে। অন্যথায় শিক্ষা দফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেই আমরা আশাবাদী।”