এলাকার দুটি হাটে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে জুয়া ও মদের আসর চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে এলাকার স্কুল পড়ুয়াদের উপর। জুয়া ও মদের আসরে গোলমালকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। গত তিন মাস ধরে বার বার পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি কোনও। এই অভিযোগ তুলে এবারে জুয়া ও মদের আসর বন্ধের দাবিতে গণসাক্ষর অভিযানে নেমেছেন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া থানা এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা ওই অভিযান শুরু করেছেন। আগামী সপ্তাহে গণসাক্ষর করা একটি স্মারকলিপি জেলা পুলিশ সুপারের হাতে তুলে দেবেন বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের ওই অভিযানকে সমর্থন করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ। তাঁর অভিযোগ, চাকুলিয়া থানার পুলিশের একাংশের মদতে এলাকার দুটি হাটে দীর্ঘদিন ধরে জুয়া ও মদের আসর চলছে। ওই অভিযোগ পৌঁছেছে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার কাছেও। তিনি বলেন, “চাকুলিয়া থানা এলাকার দুটি হাটে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে জুয়া ও মদের আসর চলছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে আমিও খবর পেয়েছি। জুয়া ও মদের আসর বন্ধ করতে খুব শীঘ্রই পুলিশ টানা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনও পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে জুয়া ও মদের আসরে মদত দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চাকুলিয়া থানার ওসি পলাশ মোহান্তের দাবি, পুলিশের নজরদারি থাকায় মাঝেমধ্যে গোপনে এলাকার দুটি হাটে জুয়া ও মদের আসর বসে। পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। চাকুলিয়া থানা এলাকার যে দুটি হাটে প্রকাশ্যে জুয়া ও মদের আসর চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে সেগুলি হল চাকুলিয়া হাট ও জনতা হাট।
প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবার চাকুলিয়া হাট ও মঙ্গল ও শুক্রবার জনতা হাট বসে। চাকুলিয়া হাটের পাশেই রয়েছে চাকুলিয়া হাইস্কুল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুটি হাটেই সপ্তাহের দুদিন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিক জুয়া ও মদের আসর বসছে। তাসের বিভিন্ন চিহ্ন আঁকা প্লাস্টিকের গুটির মাধ্যমে জুয়া খেলা চলে। স্থানীয় ভাষায় সেই জুয়া খেলা ‘ফরগুটি’ বলে পরিচিত। জুয়ার আসরের পাশেই বিভিন্ন খাবারের দোকানের আড়ালে চলে দেশি ও বিদেশি মদের কারবার। স্কুল পড়ুয়াদের একাংশও এইসব জুয়া ও মদের আসরে ভিড় করে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অনেকে হাটে গিয়ে গরু, ছাগল, সাইকেল, ধান, গম সহ বিভিন্ন ফসল বিক্রি করে জুয়া খেলায় অংশ নেন। চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান বলেন, “পুলিশের একাংশের মদতে চাকুলিয়া ও জনতা হাটে দীর্ঘদিন ধরে জুয়া ও মদের আসর চলছে। পুলিশকর্মীদের একাংশ জুয়া ও মদের আসরগুলি থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করেন। সেই কারণে বাসিন্দারা বার বার পুলিশকে মৌখিক অভিযোগ জানালেও জুয়া ও মদের আসর বন্ধ করতে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই বাসিন্দাদের আন্দোলনকে আমি সমর্থন করেছি।” চাকুলিয়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মহম্মদ মোস্তাফা জানান, বহুবার পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই।” তৃণমূল জেলা সভাপতি অমল আচার্য জানান, এলাকার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দলের তরফে পুলিশের কাছে চাকুলিয়া হাট ও জনতা হাটে জুয়া ও মদের আসর বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।