রোগী ভোগান্তি কমাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের নিশানা এ বার সরকারি হাসপাতাল।
শুক্রবারই বিধানসভায় বিরোধীরা সরকারি হাসপাতালের হাল নিয়ে সরব হয়েছিলেন। কেন রোগীরা সহজে শয্যা পান না, কেন একটা পরীক্ষার জন্য মুমূর্ষু রোগীকেও অপেক্ষা করতে হয়, তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সেই খোঁচার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী তখনই কিছু না-বললেও পরিকল্পনা পাকা করেছেন তিনি। রোগীর পরিবারের সঙ্গে ডাক্তার নিয়মিত দেখা করছেন কি না, রোগীর সঙ্গে ডাক্তাররা কেমন ব্যবহার করছেন, সব কিছুর ওপরেই নজর রাখা হবে। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে ভাবে প্রভাবশালীদের নাম করে আসা রোগীদের ভর্তির জন্য আগাম বেড বুক করে রাখেন, তার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কেন সরকারি হাসপাতালে শয্যা পেতে বা পরীক্ষা করাতে রোগীদের প্রতীক্ষায় থাকতে হয়, তার কারণ খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়েছে। দেখা গিয়েছে, বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ যেমন বড় কারণ, তেমনই কর্মীদের বড় অংশের মনোভাবও এ ক্ষেত্রে দায়ী। ডাক্তার-টেকনিশিয়ানরা অনেকেই যতটা সময় ডিউটি করার কথা, তা করেন না। ফলে এক দিনে যতগুলি পরীক্ষা হওয়ার কথা, তার চেয়ে কম হয়। তা ছাড়া, ‘তাড়াতাড়ি ডেট মিলবে না’ এমন একটা পূর্ব নির্ধারিত ধারণা থেকেও সংশ্লিষ্ট কর্মীরা কিছু না-বুঝেই ক’মাস পরের ডেট দেন। কার, কোন পরীক্ষা কত দ্রুত দরকার, সেটা বিচার করেন না তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পরীক্ষার ডেট পেতে অস্বাভাবিক দেরি হলে তার কারণ দেখাতে হবে কর্মীকে।’’
কিন্তু রোগীর বিপুল চাপ সামলানো হবে কী ভাবে? অন্য রাজ্যের চেয়ে এ রাজ্যে সরকারি পরিষেবা পান বেশি মানুষ। স্বাস্থ্য কর্তারা জানান, সেই গর্বের জায়গা রয়েছেই। কিন্তু সব চিকিৎসা ফ্রি ঘোষণার পরে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান থেকেও রোগীরা এসে নিখরচায় বড় অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন। ফলে শুধু যে এ রাজ্যের রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তা-ই নয়, সরকারি কোষাগার থেকে অর্থও বেরিয়ে যাচ্ছে প্রচুর।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘ওই রোগীরা একটি স্থানীয় ঠিকানা দিচ্ছেন। সেটা আমাদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বার বিকল্প ‘মেকানিজম’ ভাবা হয়েছে।’’ কিন্তু ‘মেকানিজম’টি কী, তা স্পষ্ট করতে চাননি তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এ বার ভিন্ রাজ্যের রোগীরা এখানকার সরকারি হাসপাতালে এলে তাঁদের জন্য আর চিকিৎসা ফ্রি থাকবে না? স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন— এ ক্ষেত্রে কিছুটা খরচ নেওয়া যায় কি না, সে নিয়ে আলোচনা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেই সেটি ঘোষণা করা হবে।