কাচের প্লেটে সাজানো রয়েছে সেদ্ধ ডিম, কাটা আপেল আর চানাচুর। পাত্রের ইয়ার-দোস্তরা নিঃশব্দে জলখাবার সারছেন।
কিন্তু পাত্র যেন একটু আনমনা। তা নিয়ে রসিকতাও চলছে নিচু স্বরে। শেষতক বন্ধুদের অনুরোধে পাত্র একটা ডিম মুখে পুরলেন।
ঠিক সেই সময় কে যেন হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল—‘পুলিশ!’
ব্যস! ওই একটিমাত্র শব্দে বদলে গেল বিয়েবাড়ির আবহ। কেউ মিলিয়ে গেলেন অন্ধকারে। কেউ মিশে গেলেন পাশের বাড়িতে। কেউ উঠলেন ছাদে।
পাত্রও ছুটলেন। মুখের ডিম তখনও শেষ হয়নি!
রুখু গলায় ওসি বললেন, ‘‘ফলো হিম!’’
আরও পড়ুন: জখমকে কাঁধে নিয়ে ছুটলেন কনস্টেবল
শুরু হল দৌড়। ফাগুন রাতের খেত যেন তেপান্তরের মাঠ। কোনও দিকে না তাকিয়ে পাঁইপাঁই করে দৌড়চ্ছেন পাত্র। পিছু পিছু ছুটছেন নওদার ওসি মৃণাল সিংহ, এসআই প্রদ্যোৎ ঘোষ ও এএসআই ডানেমূল খান।
পাক্কা দু’কিলোমিটার দৌড় শেষে আর ‘ফলো’ করা সম্ভব হল না! ওসিও দমে যাওয়ার পাত্র নন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের নির্দেশ দিলেন, ‘‘দুই বাড়িতেই নজর রাখুন। কোনও ভাবেই যেন এ বিয়ে না হয়।’’
শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের ভিকুতলায় এ ভাবেই নাবালিকার বিয়ে রুখে দিল নওদা থানার পুলিশ। ওসি মৃণালবাবু বলছেন, ‘‘গোপনে নবম শ্রেণীর ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। খবরটা পেয়েই আমরা ছুটেছিলাম। নাবালিকা অবস্থায় যাতে ওই পরিবার ফের বিয়ের ব্যবস্থা না করতে পারে সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’
গোপনে বিয়ের ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি ছিল না। সে ভাবে কাউকে নিমন্ত্রণও করা হয়নি। সবটাই চলছিল অত্যন্ত গোপনে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
ওই ছাত্রীর ঠাকুমা সাইমা বেওয়া বলছেন, ‘‘বাপহারা মেয়ে। অভাবের সংসার। বাড়ির এক ছেলে প্রতিবন্ধী। তাই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু সেটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। নাতনি সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেব না।’’
আর ঝাউবোনার বাসিন্দা পাত্রের এক আত্মীয়ের দাবি, ‘‘মেয়ে নাবালিকা জানলে তো আমরাই বিয়েতে রাজি হতাম না। শুধু শুধু ছেলেটা পুলিশের ভয়ে মাঠে মাঠে দৌড়ে বেড়াল!’’
নাবালিকার বিয়ের আসরে পুলিশ আসার পরে নবাবের জেলা নাটক বড় কম দেখেনি। সম্প্রতি হরিহরপাড়ায় পুলিশের ভয়ে নাবালিকার বাবা লুকিয়েছিলেন চৌকির তলায়। এক আত্মীয় আবার কাঁথার নীচে ঘুমের ভান করে পড়েছিলেন। সেখানেও শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশের টর্চে বেরিয়ে এসে মুচলেকা দিতে হয় তাঁদেরও!