পুলিশের জালে মূল অভিযুক্ত রবিউল। ছবি: সংগৃহীত।
এখন বাজির মরসুম নয়। আর সেই সময় প্রায় ১৩৫০ কিলো পটাশ আমদানি করলেন নৈহাটির রবিউল বাজি তৈরি করার জন্য—এ কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-র গোয়েন্দারা।
শুক্রবার মাঝরাতে টালা ব্রিজের উপর পটাশিয়াম নাইট্রেট বোঝাই মিনিট্রাকের সঙ্গেই গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছিল গাড়ির চালক এবং খালাসি। তাদের জেরা করেই জানা গিয়েছিল, উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এলাকার রবিউল ইসলাম ওই ট্রাক ভর্তি পটাশের বরাত দিয়েছিল।
রাতেই পূর্ব মেদিনীপুর থেকে রবিউলকে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় পাকড়াও করেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। এসটিএফ সূত্রে খবর, নিজের গ্রামেই বাজির দোকান আছে রবিউলের। এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, এক জন দালালের সাহায্যে সে লাইসেন্স ছাড়াই ওই পটাশিয়াম নাইট্রেট জোগাড় করেছিল। তার কাছ থেকে নৈহাটি এলাকার বেশ কিছু ব্যবসায়ী ওই পটাশ কিনবে বলেই আনিয়েছিল সে। গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই সেই ক্রেতার তালিকা পেয়েছেন।
রবিউলকে জেরা করেই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ওড়িশার বালেশ্বর জেলার রূপসার সাই ট্রেডার্সের কাছ থেকে ওই পটাশিয়াম কিনেছিল। ওই সংস্থার পিছাবানিয়ার গুদাম থেকে মাল মিনি ট্রাকে লোড করা হয়। গোয়েন্দারা রবিউলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথি থেকে জানতে পেরেছেন, সাই ট্রেডার্সের লাইসেন্স আছে পটাশিয়াম নাইট্রেট কেনা বেচা করার। কিন্তু সংস্থার মালিক সুকান্ত সাহু কোনও নথি ছাড়াই ওই বিপুল পরিমাণ পটাশিয়াম বিক্রি করেছিল রবিউলকে।
আরও পড়ুন: ভরদুপুরে ধর্মতলার কাছ থেকে উদ্ধার জাল নোট-সহ হিসাব বহির্ভুত কোটি টাকা
এসটিএফের সূত্রে খবর,প্রথমে রবিউল দাবি করেছিল, বাজি বানানোর জন্যই ওই পটাশ আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু গোয়েন্দাদের ধারণা বাজি নয়, বরং ভোটের মরসুমে দেশি বোমা তৈরি করার জন্যই আনানো হয়েছিল পটাশ। কারণ পটাশ একদিকে যেমন বাজি তৈরি করতে কাজে লাগে, তেমনি দেশি বোমা তৈরি করতেও ব্যপক ভাবে ব্যবহার করা হয় পটাশ।
গোয়েন্দাদের সন্দেহ, গ্রামে ছোট ছোট বাজি তৈরির কারখানার আড়ালেই তৈরি হচ্ছে বোমা। নৈহাটি এলাকায় এ রকম প্রচুর বেআইনি বাজি কারখানা আছে। শুক্রবার রাতেই কাঁকিনাড়ার কেউটিয়া এলাকার একটি গ্রামে বাজি তৈরি করার কারখানায় বারুদে আগুন লেগে মৃত্যু হয় হাসিনা বিবি নামে এক মহিলার। স্থানীয়দের দাবি, এ রকম অগুন্তি বাজি কারখানা আছে ওই এলাকায়। গোয়েন্দাদের অনুমান ভোটের মরসুমে ওই কারখানাগুলো সামনে রেখেই ঘুরপথে দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক যা বোমা তৈরি করতে কাজে লাগে।
আরও পড়ুন: কী ভাবে ঢুকল বিস্ফোরক, মিলছে না সদুত্তর
তবে গোয়েন্দারা চিন্তিত সাই ট্রেডার্সের মত সংস্থা নিয়ে। যারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই রবিউলের মত লোকজনকে ওই রাসায়নিক সরবরাহ করছে। এক শীর্ষ এসটিএফ কর্তা বলেন, “ রবিউলকে জেরা করে আমরা একজন দালালের খোঁজ পেয়েছি। ওই দালালের মাধ্যমেই সাই ট্রেডার্সে গিয়েছিল রবিউল। সেই দালালকে আমরা খুঁজছি। সেই সঙ্গে আমরা সাই ট্রেডার্সের মালিককেও জেরা করব।” কারণ গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ওই সংস্থা থেকে মাওবাদী বা অন্য কোনও জঙ্গি সংগঠনও ঘুরপথে বিস্ফোরক তৈরির মাল মশলা সংগ্রহ করে থাকতে পারে।