নজির: ভিক্ষের চাল বিক্রি করে শৌচাগার গড়ছেন রহিমা। —নিজস্ব চিত্র।
ইচ্ছে থাকলে ভিক্ষের টাকা দিয়েও শৌচাগার হয়!
মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের রহিমা বেওয়া বলছেন, ‘‘মায়ে-ঝিয়ে ভিক্ষে করে কিছু টাকা আর চাল জমিয়েছিলাম। সেই টাকাতেই শৌচাগার গড়ছি। মাঠে-ঘাটে যেতে সম্মানে বাধে। ভয়ও লাগে।’’
নবাবের জেলাকে নির্মল করতে উঠেপড়ে লেগেছে জেলা প্রশাসন। কোথাও সাতসকালে হুইস্ল নিয়ে মাঠে ছুটছেন বিডিও। জেলাশাসক বাড়ি বাড়ি ঘুরে বোঝাচ্ছেন, কেন শৌচাগার জরুরি। তাতে সাড়াও মিলছে। শৌচাগার তৈরি করতে ইতিমধ্যে কেউ বিক্রি করেছেন বাড়ির পোষা ছাগল, গরু কিংবা গাছ। কিন্তু ভিক্ষের জমানো চাল-টাকায় শৌচাগার? মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলছেন, ‘‘ওই বৃদ্ধা নজির তৈরি করলেন। ওঁকে সবরকম সাহায্য করব।’’
দৌলতাবাদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদক হাবিবা বিবি বলছেন, ‘‘রহিমা বেওয়া ভিক্ষে করে শৌচাগার তৈরি শুরু করলে অন্যেরা পারবেন না কেন? দু’হাজার টাকা সম্বল করে তিনি কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় কিছু স্বনির্ভরগোষ্ঠীও তাঁকে সাহায্য করবে।’’
আরও পড়ুন: শেষ হল সাইকেল সফর, পুনর্মিলন স্বামী ও স্ত্রীর
দৌলতাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম নওদাপাড়ায় টালির ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ঘরে থাকেন ৮০ বছরের রহিমা ও তাঁর মেয়ে বছর চল্লিশের কমলা খাতুন। রহিমার স্বামী মারা গিয়েছেন তিরিশ বছর আগে। তিন ছেলে আলাদা থাকেন। মা-মেয়েতে ভিক্ষে করেই দিন গুজরান করেন। দিনকয়েক আগে মেয়ে কমলাকে রহিমা বলেন, ‘জমানো চাল, টাকা দিয়ে শৌচাগার করলে কেমন হয়!’ না করেননি কমলাও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রকৃতির ডাকে বাইরে যাওয়া শরমের ব্যাপার। জমানো সম্বল দিয়েই কাজ করছি।’’
এখন বাড়িতে বসে কাজ দেখভাল করেন রহিমা। তামাম গাঁ জানে, শৌচাগার তৈরি হচ্ছে। কিন্তু রহিমা দেখেন, স্বপ্নের ভিতে ইট পড়ছে!