রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সামনে হাজির হননি তিনি। সেই ঘটনার কথা পুলিশকর্তা রাজীব কুমারের ‘সার্ভিস বুক’-এ নথিভুক্ত করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। কমিশনের তরফে সরাসরি এ নিয়ে কিছু বলা না-হলেও কমিশনের এক কর্তা জানান, রাজীব কুমারের অনুপস্থিতি সম্পর্কে পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না, রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে গত ৩১ জানুয়ারি রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছিল নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা-সহ কমিশনের অন্য কর্তারা। কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, অনেক আগে থেকে বৈঠকের কথা জানানো হলেও বৈঠকে গরহাজির ছিলেন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। কমিশনকে তিনি কিছু জানানওনি। তাঁর বদলে বৈঠকে যোগ দিতে আসা কলকাতা পুলিশের বিশেষ কমিশনার জয়ন্ত বসুর কাছ থেকেই কমিশন-কর্তারা জানতে পারেন যে রাজীব সে দিন ছুটি নিয়েছেন। এ নিয়ে কমিশন অসন্তোষ প্রকাশের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘এটা ছোট ব্যাপার। তার জন্য নির্বাচন কমিশনের খারাপ লাগলে দুঃখিত।’’
কমিশন কিন্তু বিষয়টি হাল্কা ভাবে নেয়নি। সেই কারণেই রাজীবের অনুপস্থিতিকে তাঁর ‘সার্ভিস বুক’-এ উল্লেখ করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। রাজীব কুমার এখন রাজ্য পুলিশের এডিজি-সিআইডি।
‘সার্ভিস বুক’-এ বিষয়টি নথিভুক্ত হলে কী সমস্যা হতে পারে?
আরও পড়ুন: চেনা মুখই কি ভরসা তৃণমূলের, মমতার বাড়িতে আজ দলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠক
প্রবীণ আমলাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমনিতে পদোন্নতিতে এর কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু কোনও অফিসারের ক্ষেত্রে এমনটা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ডেপুটেশন’ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, এক জন অফিসারের কর্মজীবনের সব দিকগুলি তাঁর ‘সার্ভিস বুক’-এ ধরা থাকে। সেই কারণে কোনও অফিসারের কাছেই এমন পদক্ষেপ কাম্য নয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে সোমবার রাতে রাজীব কুমারের মোবাইল নম্বরে টেক্সট মেসেজ পাঠানো হয়। এই প্রতিবেদন ছাপতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত সেই মেসেজের কোনও জবাব আসেনি। রাজ্য প্রশাসনের তরফেও সরকারি ভাবে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
তবে রাজ্যের প্রবীণ এবং প্রাক্তন আমলাদের অনেকেই এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বিক ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বৈঠকটি যে হেতু কমিশন ডেকেছিল, তাই সেখানে অনুপস্থিত কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার এক্তিয়ার তাদের রয়েছে। সেই দিক থেকে কমিশনের নির্দেশ মানতে বাধ্য রাজ্য প্রশাসন।