ত্রাণ বিলির কর্মসূচিতে হামলার ছবি নিজেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ ওরাওঁ। ছবি: সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রী ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ না ঘটানোর আহ্বান জানালেও থামছে না বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের উপরে আক্রমণ। মঙ্গলবার আক্রান্ত হলেন আর এক জনজাতি জনপ্রতিনিধি। কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওরাওঁয়ের উপরে হামলা হল ভারত-ভুটান সীমান্তের একটি গ্রামে। বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘সরকার ত্রাণ দিতে ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপির তরফ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা আটকানো হচ্ছে।’’ সোমবারও অন্য একটি এলাকায় তাঁর উদ্যোগে আয়োজিত ত্রাণ বিলির কর্মসূচি ভেস্তে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার ফের একই ঘটনা ঘটল।
মঙ্গলবার দুপুরের হামলাটি হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার বিত্তিবাড়ি গ্রামে। স্থানীয় বিধায়ক মনোজের নেতৃত্বে ত্রাণ বিলির কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছিল। বিধায়কের দাবি, তাঁর কর্মসূচি আগে থেকেই ঘোষিত ছিল। কিন্তু পুলিশ কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি। বিত্তিবাড়ি গ্রামের বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসে তৃণমূল হামলা চালিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
ঘটনার যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ককে ঘিরে ধরে মারধরের চেষ্টা হচ্ছে। আর তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিত্তিবাড়িতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের চড়-থাপ্পড় মারা হয়। লাঠিও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। জওয়ানরা লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যান হামলাকারীদের দিকে। তুমুল ধস্তাধস্তি শুরু হয়। উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় এলাকা ছেড়ে চলে যান বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। ভাঙচুর চালানো হয় তাঁর গাড়িতেও।
মনোজ বলেন, ‘‘সোমবার মাঝেরডাবরি গ্রামেও একই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানকার কর্মসূচিও আগে থেকেই ঘোষিত ছিল। কিন্তু সেখানেও ত্রাণ বিলি করতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল আচমকা হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মসূচি বাতিল করে দেয়।’’ আগে থেকে ঘোষণা করে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া সত্ত্বেও পুলিশের কোনও সহযোগিতা মিলছে না বলে বিজেপির অভিযোগ।
সোমবার পার্শ্ববর্তী জেলা জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় গিয়ে আক্রান্ত হন উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তৃণমূল সে হামলাকে ‘জনরোষ’ বলে দাবি করলেও বিজেপির তরফ থেকে তাকে ‘পরিকল্পিত’ হামলা বলে দাবি করা হয়। নাগরাকাটার ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’’ অশান্তি না করার বার্তা দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘চারপাশের মানুষকে সহযোগিতা করুন। এই সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়। আমরা একে অপরের পাশে থেকে একসঙ্গে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করব।’’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে যে কোনও কাজ হয়নি, মঙ্গলবার কুমারগ্রামের ঘটনায় তা স্পষ্ট।