শাসকের দ্বন্দ্বে বলি ছাত্র, সরব বিরোধীরা

তৃণমূলের তরফেও অন্তর্তদন্ত করা হচ্ছে বলে পার্থবাবু জানাচ্ছেন। তবে বারবার কেন শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিরীহ মানুষকে বলি হতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

বলি: গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গুলিতে মৃত বাসন্তীর স্কুলপড়ুয়া রিয়াজুল মোল্লা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বাসন্তীতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে সরব হল বিরোধীরা। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের প্রবল সমালোচনার মুখে শুক্রবার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে তৃণমূলের মহাসচিব অবশ্য বলেছেন, ‘‘দলনেত্রী সবসময়ই বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটা অনুচিত। কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে দলের মধ্যে তা আলোচনা করা যেতে পারে। দলনেত্রী এ ধরনের কাজের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।’’ তৃণমূলের তরফেও অন্তর্তদন্ত করা হচ্ছে বলে পার্থবাবু জানাচ্ছেন। তবে বারবার কেন শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিরীহ মানুষকে বলি হতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফেরার পথে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে বছর নয়েকের ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। গরিব পরিবারের ওই কিশোরের মৃত্যুর দায় তৃণমূলের কেউ কেন স্বীকার করছে না, এ দিন সে প্রশ্ন তুলেছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শিশু কমিশন কোথায় গেল? ওই শিশুটির পরিবারের পাশে দাঁড়াল না কেন শিশু কমিশন?’’ নিহত পুত্রের দেহ কোলে নিয়ে বাবার অসহায় মুখ কেন বারবার রাজ্যের মানুষকে দেখতে হবে, এই প্রশ্ন তুলে সুজনবাবুর মন্তব্য, ‘‘বাবার কাঁধে শিশুর লাশ, এর থেকে বড় বোঝা আর হয় না!’’ কিশোরের মৃত্যুর প্রতিবাদে এ দিন শিয়ালদহ থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত মিছিল করে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী, গোসাবা, ভাঙড়ের মতো এলাকা। এই গোলমালের জন্য তৃণমূল নেতৃত্বকেই দায়ী করে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘তৃণমূলের পাপের ফল ভোগ করতে হচ্ছে নিরীহদের। বাম জমানায় যারা সিপিএমের পতাকা হাতে গুণ্ডাগিরি করেছিল, তারাই তৃণমূলের মন্ত্রে হঠাৎ দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হয়ে গেল!’’ কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘জঙ্গলের রাজত্ব চলছে।’’ একই ভাবে বাঁকুড়ার ওন্দায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল আর যুব তৃণমূল অর্থাৎ পিসি-ভাইপোর মধ্যে গোলমাল চলছে। আর মারা পড়ছেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র। সরকার সুরক্ষা দিতে পারছে না, সরকারের দলের লোকেরাই মেরে ফেলছে। এর থেকে দুর্দিন পশ্চিমঙ্গে আগে আসেনি।’’

Advertisement

বিরোধীদের চাপে শেষ পর্যন্ত পার্থবাবু বলার চেষ্টা করেন, ‘‘যারা এ ধরনের কাজে যুক্ত, তারা দলকে শক্তিশালী করছে না। তারা নিজেরা নিজেদের শক্তিশালী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।’’ কিন্তু মুখে তৃণমূল নেতৃত্ব এ কথা বললেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেও সমস্যার মীমাংসা হয়নি। ফলে হুঁশিয়ারি বাস্তবায়নের কোনও চেষ্টা শাসক দল করে না বলেই বিরোধীদের দাবি। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূল নেত্রী বলতে পারবেন যে আরাবুল বা অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূলের কেউ নয়! উনি মুখে বলবেন ব্যবস্থা নেবেন আর তাদেরই সঙ্গে নিয়ে ঘুরবেন, তা হলে পরিবর্তন হবে কী ভাবে! উনি তো বেঙ্গল ফর বুলেট তৈরি করছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন