গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আদালতের নির্দেশের পর এক্স হ্যান্ডলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু লিখেছেন, ‘‘আজ মহামান্য কলকাতা হাই কোর্ট ভর্তির বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করেননি - এই সিদ্ধান্তে আমরা কৃতজ্ঞ। সরকারি আইন এবং আদালতের নির্দেশ মেনেই যে ভাবে পোর্টালে ভর্তি চলছে, সেই ভাবেই উচ্চশিক্ষা বিভাগ ভর্তির পোর্টালের কাজ চালিয়ে যাবে। ’’
রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় আপাতত হস্তক্ষেপ করল না হাই কোর্ট। তবে রাজ্যকে এ ব্যাপারে হলফনামা দিতে বলেছে আদালত। পাশাপাশি ২০১০ সালে যাঁরা ওবিসি তালিকায় নথিভুক্ত ছিলেন, তাঁদের অধিকারও যে ক্ষুণ্ণ হবে না, তা-ও হলফনামায় জানাতে বলা হয়েছে রাজ্যকে। পরের সপ্তাহে মামলার শুনানি রয়েছে।
রাজ্য আদালতে জানায়, হাই কোর্টের ১৭ জুনের নির্দেশের পরে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ভর্তি এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, এখন ওবিসির শ্রেণিবিন্যাস করা হবে না।
বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘‘শ্রেণিবিন্যাস করা না-হলে আপনার অধিকার কী ভাবে বঞ্চিত হবে? এখন শ্রেণিবিন্যাস বন্ধ রেখেছে রাজ্য। পরে তারা করলে যদি আপনি অধিকার বঞ্চিত হন, তখন আদালতে আসবেন।’’
বিচারপতি মান্থা জানান, তারা মেধাতালিকা তৈরি করেনি। হাই কোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্য বলেছে, এখন সকলকে ভর্তি নিতে পারবে। পরে শ্রেণিবিন্যাস করা হবে। যদি হাই কোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ না করে, তখন এই অভিযোগ তোলা যাবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি মান্থা।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ মামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিচারপতি মান্থা বলেন, কী ভাবে এই অভিযোগ করছেন? ভর্তি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ১২ জুন। আদালতের নির্দেশের পরে শ্রেণিবিন্যাস স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য মাঝামাঝি জায়গায় আটকে গিয়েছে। তারা সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে। ধরুন, শীর্ষ আদালত আমাদের রায় খারিজ করে দিল। তখন কী হবে? ভর্তি শুরু নিয়ে কী অসুবিধা?’’
ওবিসি মামলার শুনানি শুরু কলকাতা হাই কোর্টে। মামলাকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওবিসি শ্রেণিবিন্যাস করে কলেজে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওবিসি-এ এবং ওবিসি -বি ভাগ করে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। গত ১৭ জুন ওবিসির সাম্প্রতিক তালিকার উপর স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। তার পরেও আদালতের নির্দেশ না মেনে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।
২০১০ সালের আগে মোট ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে ঘোষণা করা হয়। অমুসলিম জনগোষ্ঠী ছিল ৫৪টি এবং মুসলিম ১২টি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে যাদের ওবিসি-তে নথিভুক্ত করা হয়েছে, তাদের শংসাপত্র বাতিল হয়েছে। তবে শংসাপত্র বাতিল মামলার শুনানিতে রাজ্যের বক্তব্য ছিল, ওবিসি মামলার জন্য কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগপ্রক্রিয়া, সব আটকে রয়েছে। আদালত জানায়, এমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ওবিসি সংক্রান্ত রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তির উপর ইতিমধ্যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। মামলাকারী পক্ষের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশের ফলে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি তালিকার বৈধতা নেই। ২০১০ সালের আগে যে ৬৬টি সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, সেটিই বৈধ।
মামলাকারীর আইনজীবী কলেজে ভর্তির পোর্টালে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দ্রুত শুনানির আর্জিও জানানো হয় তাঁর পক্ষ থেকে। মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, আদালতের নির্দেশমতো ২০১০ সালের আগে ওবিসি শংসাপত্রে কোনও শ্রেণিবিন্যাস ছিল না। তবে কলেজে ভর্তির পোর্টালে এখনও ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি আলাদা ভাবে উল্লেখ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই মামলারই শুনানি।
অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) শংসাপত্র বাতিল মামলায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে! এমন অভিযোগ তুলে আবার কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মামলাকারীর বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ না মেনেই কলেজে ভর্তির পোর্টাল চলছে। ওই অনলাইন পোর্টালে এখনও ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি নিয়ে আলাদা ভাবে ভর্তির কথা বলা হচ্ছে!