উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

সন্ধে নামলেই বহিরাগতদের দখলে ক্যাম্পাস

সন্ধ্যের পর থেকেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাংশ বহিরাগতদের দখলে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। মোটরবাইক নিয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে ছাত্রীদের হস্টেলের আশেপাশে। ক্যাম্পাসের ফাঁকা জায়গায় বসছে মদের আসরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ নম্বর, ছ’নম্বর গেটের কাছে ক্যাম্পাসের ভিতরেই গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মদ্যপানের আসর।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০১:৩০
Share:

সন্ধ্যের পর থেকেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাংশ বহিরাগতদের দখলে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। মোটরবাইক নিয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে ছাত্রীদের হস্টেলের আশেপাশে। ক্যাম্পাসের ফাঁকা জায়গায় বসছে মদের আসরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ নম্বর, ছ’নম্বর গেটের কাছে ক্যাম্পাসের ভিতরেই গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মদ্যপানের আসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে অংশে ওই এলাকা নিরিবিলি। পাঁচিল ভাঙা। গেটে কোনও নিরাপত্তা রক্ষীও থাকে না। তাই সন্ধে নামলেই সমাজবিরোধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হয়ে উঠছে গোটা এলাকা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মুখে বহিরাগত এক যুবক মোটরবাইকে করে এসে এক মহিলা গবেষকের শ্লীলতাহানি করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পদার্থবিদ্যা বিভাগের কাছে এই ঘটনার পরেই সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা। অবিলম্বে এ সব বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। কয়েকজন ছাত্রীর কথায়, ‘‘কেন কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছেন না? নজরদারির জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাতে অনেক দিন থেকেই বলা হচ্ছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের অনেক এলাকাতেই আলোর ব্যবস্থা নেই।’’ বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত ছ’ নম্বর গেট দিয়ে নিউ রঙিয়ার দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর বিকেল পাঁচটা থেকে অন্তত রাত ১০ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশি টহলদারির জন্য আবেদন জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যদিও ঘটনার দুই দিন পরেও ক্যাম্পাসে কোনও রকম পুলিশি টহলদারি শুরু হয়নি বলে অভিযোগ।

উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘মোটরবাইকে করে বহিরাগতদের ঘোরাফেরা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশকেও নজরদারি চালাতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ উপাচার্য জানান, মহিলা গবেষকের শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখে মামলা রুজু করবে। পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘এখনও আমার কাছে ক্যাম্পাসে টহলদারির কোনও প্রস্তাব আসেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার জন্য টহলদারি বাড়াতে চাইলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করব।’’

Advertisement

ক্যাম্পাসে চারটি ছাত্রী হস্টেল রয়েছে। ছাত্রী হস্টেলের চত্বরে দেখা যায়, বিকেলের পর থেকেই বাইক নিয়ে ঘুরতে থাকে আশেপাশে এলাকার তরুণদের একাংশ। মেয়েদের তারা উত্যক্তও করে বলে অভিযোগ। কোনও ঘটনা ঘটার পর কিছুদিন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা থাকলেও পরে তা বজায় থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগে অন্তত ১১০ জন কর্মী রয়েছেন। প্রতিটি
শিফটে গড়ে ৩৫ জন করে কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে বিরাট এলাকা জুড়ে থাকা এই ক্যাম্পাসের সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। বেসরকারি সংস্থাকে সেই দায়িত্ব দিতে চাইলে কর্মী সংগঠনগুলিও বাধা দেয়। সে কারণে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিকে ঝুঁকেছেন কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, পাঁচ ও ছ’ নম্বর গেটের দিকে ক্যাম্পাসের পাঁচিল ভাঙা। গেট আটকাবারও কোনও ব্যবস্থা নেই। পাঁচিল ভেঙে ইট খুলে বাসিন্দারা নিয়ে নিয়েছেন। সংলগ্ন তারাবাড়ি, রঙিয়া থেকে বাসিন্দারা অবাধে মোটরবাইক নিয়ে ঢুকে পড়েন। রিসার্চ স্কলার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অনুরাগ চৌধুরী এবং ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্মল সাহারা বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসের ওই অংশে মদের বোতলের ছড়াছড়ি। সন্ধ্যা হলেই বাইরের লোকজনের আড্ডা জমে। অবিলম্বে সীমানা পাঁচিল দেওয়া দরকার। গেটে নজরদারির জন্য নিরাপত্তা রক্ষী রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন