INDIA and Abhishek Banerjee

ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে অভিষেকের মুখে ‘ইন্ডিয়া’! জোটের বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে লেখা ‘অভিষেক’

ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে অভিষেক তাঁর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা বেণুগোপাল-সহ ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানালেও নিশানা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতাদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০৯
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক শেষে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণেই ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠকে হাজির হতে পারেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ কয়েক ঘণ্টা পরে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দফতর থেকে বেরিয়ে অভিষেক বললেন, ‘‘আমার প্রতি ‘ইন্ডিয়া’র প্রবীণ নেতারা যে ভাবে সমর্থন জানিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’

Advertisement

ইডির দফতরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে সওয়া ন’ঘণ্টা পর বেরিয়ে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক বেণুগোপালের নামও করলেন অভিষেক। যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। কিন্তু সর্বভারতীয় কংগ্রেসের প্রশংসা করার পাশাপাশি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে অভিষেক নিশানা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসকে। তাঁর বিরুদ্ধে ইডির তদন্ত নিয়ে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় এবং প্রদেশ নেতৃত্বের ‘পরস্পরবিরোধী’ অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে সনিয়া গান্ধীর দলের ‘শৃঙ্খলা’ নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন। অভিষেক আরও বলেন, ‘‘ওঁরা (প্রদেশ কংগ্রেস) যদি দলের নেতৃত্বকে অগ্রাহ্য করেন আমি কী বলতে পারি? কংগ্রেসের দলীয় শৃঙ্খলা কোথায় সেটা কংগ্রেস বিচার করুক। তৃণমূলের প্রসঙ্গ হলে আমি বলতে পারতাম।’’ পাশাপাশি অভিষেক তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কৌশল স্থির করতে বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্বকে।

বুধবার অভিষেককে তলব করেছিল ইডি। আবার ওই দিনই ছিল দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধী জোটের ‘সমন্বয় কমিটি’র প্রথম বৈঠক। কমিটির সদস্য হিসাবে সেই বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে যাওয়ার কথা ছিল অভিষেকের। কিন্তু তার আগেই ইডির নোটিস আসে তাঁর কাছে। বুধবারই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে এসে দেখা করতে বলা হয়। ইডির সমন পাওয়ায় ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় প্রথম বৈঠকে গরহাজির অভিষেকের জন্য বুধবার একটি চেয়ার ফাঁকা রেখে বৈঠক করেন বিরোধী নেতারা। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির সদস্য শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত বৈঠকের আগে বলেন, ‘‘অভিষেক আজ বৈঠকে থাকতে পারলেন না, কারণ ইডি আর বিজেপি তেমনটা চায়নি।’’

Advertisement

অভিষেক নিয়ে ‘ভিন্নমত’ কংগ্রেসে

এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের দিল্লির বাংলোয় ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকের পরে কংগ্রেস নেতা বেণুগোপাল বলেন, ‘‘সমন্বয় কমিটির সদস্য অভিষেককে আজকেই তলব করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই ঘটনা কেন্দ্রের প্রতিহিংসার রাজনীতির উদাহরণ।’’ ‘ইন্ডিয়া’র তরফে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতেও অভিষেকের নাম করে তোলা হয়েছে ‘বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি’র প্রসঙ্গ। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বুধবার কার্যত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সুরেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি তদন্ত নিয়ে অভিষেককে নিশানা করেছেন। সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করেই কংগ্রেসের ‘দলীয় শৃঙ্খলা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক।

শুধু তৃণমূলকে আটকাতে চায় বিজেপি

সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে প্রথমেই গত ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ তোলেন অভিষেক। বলেন, ‘‘১৪ সদস্যের কমিটিতে আমার দলের তরফে প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে মনোনীত করা হয়েছিল। সব দল ছেড়ে দিয়ে বেছে বেছে কাকে ইডির নোটিস দেওয়া হল? কখন দিল?’’ বুধবারের পরিবর্তে সোম, মঙ্গল, বা বৃহস্পতিবার ইডি তলব করলে তিনি ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে হাজির হতে পারতেন জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি বেছে বেছে তৃণমূলের প্রতিনিধিকে আটকেছে। বিরোধী জোট গঠনে তৃণমূলের ভূমিকা কী তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজেপি শুধুমাত্র তৃণমূলকেই আটকাতে চায়।’’ প্রসঙ্গত, নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে অভিষেক রবিবার লিখেছিলেন, ‘‘ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে, যে কমিটির আমিও এক জন সদস্য। কিন্তু ইডি ওই দিনই আমাকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে! এই মাত্র সেই নোটিস পেলাম। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কাপুরুষতা ও অন্তঃসারশূন্যতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারছি না।’’

বসে ঠিক করুক কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি

সিবিআই-ইডির হাতে গ্রেফতারির সম্ভাবনা এড়াতেই তিনি বার বার রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলি। বুধবার রাতে সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অভিষেক প্রথমেই বলেই, ‘‘আমি রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতে যাইনি।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি যদি আদালতে না যেতাম, তখন বলা হত, ‘কোনও দোষ না করলে ভয় কেন? কেন আদালতে যাচ্ছে না।’’ রাজ্যের তিন বিরোধী দল কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি এই অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি বসে ঠিক করুক কী বলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন