লোকশিক্ষা: ‘প্যাডম্যান’ সিনেমা দেখছেন মহিলারা। হাবড়া। ছবি: শান্তনু হালদার
বিনোদনের পথে জ্ঞানার্জন। এবং সেই জ্ঞানলাভের পথ ধরেই ‘প্যাডম্যান’ এখন সিনেমা হল থেকে হেঁশেলে। এমন একটি বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে যে, তার আবেদনে বাঁধা পড়ছে মেয়েমহল। প্রেক্ষিতটা সামাজিক। স্বাস্থ্যগত বললেও ভুল হয় না।
কিন্তু বাধা সবটা তো আর রাতারাতি সরে যাওয়া সম্ভব নয়। সরেনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটির ক্ষেত্রেও। স্কুল থেকে সে ‘পিরিয়ড’ চলাকালীন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের গুরুত্বের কথা শুনে এসেছিল। বাড়িতে ফিরে বাড়ির বয়স্ক মহিলাদের বিষয়টি জানায় সে। কিন্তু মেয়ের কথায় তত গুরুত্ব দেননি তাঁরা। কারণ, ‘পিরিয়ডে’র সময়ে তাঁরা তো বরাবর ছেঁড়া কাপড়ই ব্যবহার করে এসেছেন!
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া-১ ব্লকের গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করা অনেক মহিলা এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। ন্যাপকিনের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁরা সচেতনও নন। এখনও তাঁরা পিরিয়ডের সময়ে ছেঁড়া কাপড় ব্যবহার করেন। ফলে পরিচ্ছন্নতার অভাবে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের যৌনরোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা।
‘প্যাডম্যান’ তাই অস্ত্র হল হাওড়া ব্লক প্রশাসনেরও। ঋতুচক্র চলার সময়ে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে এ বার তারাও পদক্ষপ করল। বৃহস্পতিবার বিশ্ব নারী দিবসে মহিলাদের মধ্যে ওই বিষয়ে লজ্জা ভাঙাতে স্থানীয় সিনেমা হলে দেখানো হল ‘প্যাডম্যান’। ছবিটি দেখতে এসেছিলেন প্রায় ৬০০ মহিলা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক এলাকার আশাকর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় কিশোরীদের নিয়ে আসা হয়েছিল। সিনেমা দেখানোর আগে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বিষয়ে সচেতন করতে আয়োজন করা হয়েছিল একটি আলোচনা সভারও।
কেন সিনেমা? হাবড়া-১ ব্লকের বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘কোনও ঘটনা যদি সিনেমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দেখানো যায়, তা হলে তার প্রভাব বেশি হয়। ‘প্যাডম্যান’ যেহেতু স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার সম্পর্কে জন সচেতনতামূলক একটি ছবি, তাই সেটি দেখানো হয়েছে।’’ এ দিন যাঁরা সিনেমাটি দেখলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন মহিলা জানালেন, সিনেমাতে অক্ষয় কুমার যে ভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে প্রতিপদে লড়াই করেছেন, পরিবার এবং আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে বিরোধিতা পেয়েও থেমে থাকেননি, তা মহিলাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘আমরা তো ঋতু চলা কালে ছেঁড়া ন্যাকড়াই ব্যবহার করতাম আমাদের সময়ে। মা-ঠাকুরমাদেরও দেখেছি কাপড়ই ব্যবহার করতে। কিন্তু তা যে কত বিপজ্জনক, এই সিনেমাটি না দেখলে তা জানতেও পারতাম না।’’
তামিলনাড়ুর সমাজকর্মী অরুণাচলম মুরুগানাথমের স্ত্রী পিরিয়ড সংক্রান্ত রোগে ভুগে মারা গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে অরুণাচলম সুলভ মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করেন। ওই কাহিনি নিয়েই ছবি। কয়েকজন ছাত্রী জানাল, ‘‘বাড়ির মহিলাদের বোঝাতে অসুবিধা হয়। তবে, সিনেমা দেখবার পর যদি ওঁদের ভুল ভাঙে!’’ বিডিও বলেন, ‘‘এ দিন যাঁরা সিনেমা দেখতে এসেছিলেন পরবর্তী সময়ে তাঁরা নিজেদের এলাকায় ওই বিষয়ে প্রচার করবেন। আমাদের আর্জি, মহিলারা লজ্জা থেকে বেরিয়ে অসুখ থেকে মুক্ত হোন।’’
এক ওষুধের দোকানি বলছিলেন, ‘‘গ্রামের মহিলারা ন্যাপকিন কিনতে এসে এখনও ইতস্তত করেন, লজ্জা পান। দোকানের অন্য ক্রেতারা চলে গেলে তবে তাঁরা চাপাস্বরে প্যাডের কথা বলেন।’’ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে মহিলাদের সাদা স্রাব, সংক্রমণ ইত্যাদি হতে পারে। এমনকী, সন্তান হওয়ার সময়েও সমস্যা হতে পারে।