ভোট সামনে, নজরে পড়ার কাজেই জোর

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে ৭৪টি ব্লক রয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের ছ’টি জেলা নিয়ে এই পিছিয়ে পড়া অঞ্চল।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৪
Share:

ফাইল চিত্র।

আগামী বছরের গোড়ার দিকে যে কোনও সময়ে পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজতে পারে। তাই তার আগেই ‘মানুষের চোখে পড়ে’, এমন কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবন ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছিল নবান্ন। তিনটি পর্ষদই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে নবান্নে। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে।

Advertisement

রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ বদ্বীপ এলাকা, পশ্চিমাঞ্চলের জঙ্গলমহল আর উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা— সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্থাই মূল সমস্যা। এতে যেমন স্থানীয় মানুষ নিত্য অসুবিধায় পড়ছেন, পর্যটনও মার খাচ্ছে। তাই মূলত রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণে জোর দেওয়া হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি, পানীয় জল ও স্কুল বাড়ি তৈরির দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘পরিকাঠামো উন্নয়নে এই কাজগুলি সহজেই লোকের নজরে পড়ে।’’

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে ৭৪টি ব্লক রয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের ছ’টি জেলা নিয়ে এই পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। এখানে এক গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের যোগাযোগ ঘটাতে পাকা রাস্তা তৈরি হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার মধ্যে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামবাসীদের রোজগার বাড়াতে কেন্দু পাতা, আম্রপালি, মল্লিকা এবং আলফানসো আমের চারা গাছ গ্রামবাসীদের দেওয়া হচ্ছে বিনা পয়সায়। এই দফতরের এক কর্তা জানান, এ বছর বরাদ্দ ১৪৯ কোটি টাকার ৭৬%-ই খরচ হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘নবান্নের পাঠানো তালিকা মেনে রাস্তা, সেতু, পানীয় জল এবং কর্মসংস্থানমুখী কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

উন্নয়নের নকশা সুন্দরবনেও প্রায় একই রকম। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পাওয়া সুন্দরবনের উন্নয়ন থমকে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুলতার জন্য। এখানে ম্যানগ্রোভ ও বদ্বীপ এলাকা মিলিয়ে ১০২টি দ্বীপ রয়েছে। তার মধ্যে ৫৪টি দ্বীপে ৫৫ লক্ষ মানুষের বাস। বাকিটা গভীর জঙ্গল। ৬৮টি প্রজাতির গাছ রয়েছে এই জঙ্গলে। ও পারে বাংলাদেশ।

দফতরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার কথায়, ‘‘কাশ্মীরের মতো সুন্দরবনও রত্নগর্ভা। একটার সঙ্গে আর একটা দ্বীপের সংযোগ ঘটাতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি সেতু তৈরি হবে। এর মধ্যে সাতটির কাজ শেষের পথে।’’ এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যা নদীর উপর পাথরপ্রতিমা-মন্দিরঘাট এবং গদখালি-গোসাবা সেতু। দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, দ্বীপগুলির মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সড়ক পথে সরাসরি সুন্দরবনে আসতে পারবেন। হাতানিয়া–দোয়ানিয়া সেতুর কাজ শেষ হলে বার্জের জন্য অপেক্ষা না করে সরাকরি কলকাতা থেকে বকখালি যাওয়া যাবে।

পিছিয়ে পড়া উত্তরবঙ্গ উন্নয়নেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে নবান্ন। দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কথায়, ‘‘পর্ষদ এলাকার সাতটি জেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তা, পানীয় জল এবং আলো।’’

দফতরের এক কর্তা জানান, তরাই, ডুয়ার্সে চা-বাগান এবং পাহাড় রয়েছে উত্তরবঙ্গে। এখানে পর্যটক টানতে বেশ কিছু পদক্ষেপ জরুরি। যোগাযোগ বাড়াতে মূলত দরকার পরিবহণের সংখ্যা বাড়ানো, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভাল থাকার বন্দোবস্ত। পাশাপাশি, এখানকার সীমান্ত এলাকার রাস্তা তৈরিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন