অবরোধে ট্রেন আটকে থাকার জেরে হাওড়া স্টেশনে অপেক্ষমান ষাত্রীদের ভিড়। — দীপঙ্কর মজুমদার
প্রথমে বাসে। তার পরে অটোতে। তার পরে কিছুটা হেঁটে। শেষে পুলিশের গাড়িতে আরামবাগ হাসপাতালে পৌঁছেও নিজের এক বছরের ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না আরামবাগের বেড়াবেড়ি গ্রামের এক ব্যবসায়ী। বাসে যে পথ যেতে ৪৫ মিনিট লাগে, বুধবার তৃণমূলের অবরোধের জেরে ছেলেকে কোলে নিয়ে সেই পথ পাড়ি দিতে তাঁর লেগে গিয়েছিল দু’ঘণ্টার বেশি! হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে শিশুটিকে আর চিকিৎসার সুযোগ পাননি চিকিৎসকেরা। তাঁরা মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটির পরিবারের তরফে কোথাও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তার বাবা বৃন্দাবন পরামাণিকের আক্ষেপ, ‘‘আমার একমাত্র ছেলেটা জ্বর-সর্দি-হাঁপানিতে ভুগছিল। অবরোধে আটকে না পড়ে ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে হয়তো ওকে বাঁচাতে পারতাম।’’ ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী। এ দিন বিকেলে আরামবাগ লিঙ্ক রোডে ওই অবরোধে তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘শুধু আমাদের অবরোধের জন্যই নয়, রাস্তার একদিক সারানো হচ্ছিল বলে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। ঘটনাটি খোঁজ নিচ্ছি।’’
সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকেই আরামবাগ লিঙ্ক রোড-সহ মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তার জেরে সাধারণ মানুষ নাকাল হন। সব রাস্তাতেই যান চলাচল থমকে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য। বৃন্দাবনবাবু যখন ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশে বের হন, তখন বিকেল ৩টে। প্রথমে বাসে উঠলেও ধীর গতি দেখে প্রমাদ গোনেন তিনি। আরামবাগ লিঙ্ক রোডের গৌরহাটি মোড়ে বাস থেকে নেমে অটোতে চড়েন। কিন্তু সামনে গাড়ির লম্বা লাইন থাকায় সেই অটোও কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়। এর পরে ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন বৃন্দাবনবাবু। রাস্তার এক ধারে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আইসি (আরামবাগ) অলোকরঞ্জন মুন্সি। বৃন্দাবনবাবু তাঁর কাছে গিয়ে সাহায্য চান। আইসি তাঁকে গাড়িতে তুলে নেন।
হুটার বাজিয়ে কোনও মতে রাস্তা করে আইসি-র গাড়ি যখন হাসপাতালে পৌঁছয়, তখন সওয়া পাঁচটা বেজে গিয়েছে। এত চেষ্টা করেও ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি বৃন্দাবনবাবু। আফশোস করছেন আইসি-ও।