ঝাড়গ্রামের সভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রবিবার ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের প্রীতি সম্মেলনে যোগ দিয়ে পার্থ বলেন, ‘‘মানুষ কী চাইছে এটা যদি না বুঝতে পারি, তা হলে সেটা বড় ভুল হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি এটা জানিয়ে দিতে ভোলেননি, ‘‘গড়বেন মমতা, ভাঙবেন আপনারা, এটা হতে পারে না।’’ শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জঙ্গলমহলের মানুষের মন বুঝতে আরও সক্রিয় হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর বার্তা পেয়ে পরের দিনই লালগড়ে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা। কথা বলেছিলেন বাসিন্দাদের সঙ্গে। এ দিন ফের এল একই বার্তা। পার্থ বললেন, ‘‘আমার অনুরোধ, যাঁরা সে দিনের আন্দোলনের পাশে ছিলেন বা আমরা তাঁদের পাশে ছিলাম, তাঁদের ভুলবেন না। তাঁদের সঙ্গে নিন। লোকে দেখে কারা সঙ্গে আছেন।’’ পার্থই তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যবেক্ষক। তাঁর নির্দেশের পরে সুকুমারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষের সঙ্গে আরও বেশি করে মিশে, আরও যত্ন নিয়ে তাঁদের চাওয়া পাওয়া বুঝতে কর্মীদের বলা হবে।’’
প্রীতি সম্মেলনে পার্থ কোন্দল এড়ানোর বার্তা দিলেও ‘অস্বস্তি’ এড়ানো যায়নি। কেন সম্মেলনে ডাকা হয়নি— এই অভিযোগে সরব হন কয়েকজন তৃণমূলকর্মী। বেশ কিছুক্ষণ চলে বিশৃঙ্খলা। চেয়ার ছেড়ে উঠে ওই কর্মীদের সতর্ক করেন তৃণমূলের মহাসচিব। পরে তিনি বলেন, ‘‘অতি উৎসাহী কিছু কর্মী অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমি নিজে খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। সংখ্যাতত্ত্বে ততটা বিশ্বাস করি না, যতটা বিশ্বাস করি শৃঙ্খলায়। এই ধরনের আচরণ কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। অভিযোগ থাকলে তা দলের মধ্যেই থাকবে।’’
লালগড়ে শবর মৃত্যু সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলেননি মমতা। এ দিন পার্থও শুধু বলেছেন, ‘‘এখানে কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। আমাদের দৃষ্টিতে আছেও।’’ পার্থের মতে, ‘‘যে ধরণের কাজ জঙ্গলমহলে হয়েছে সেখানে অসন্তুষ্টির কারণ থাকার কথা নয়। আর যেন তা না হয়। আমরা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এসেছি। ভুলভ্রান্তি হতে পারে। মানুষ যদি মনে করে আমরা অবহেলিত হচ্ছি তাহলে সেটা খুব দুঃখের হবে।’’
তৃণমূল মহাসচিবের কথায় ঘুরেফিরে এসেছে মানুষের পাশে থাকার কথা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়ানোর পরামর্শ। তাই কখনও তিনি বলেছেন, ‘‘অর্ধেক লোক তো আমাদের থেকেই বিজেপিতে চলে গিয়েছে। কারণ, আমরা পুরনো লোকেদের গুরুত্ব দিইনি। এমন কাজে নিজেদের জড়াবেন না, যেটা মানুষ পছন্দ করে না।’’ আবার কখনও তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভরসা রাখুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। সবথেকে বেশি ভরসা রাখুন মানুষের উপর।’’