ফেল-সুরাহায় পুরনো নিয়মই চাইছেন পার্থ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পার্ট ওয়ানে রেকর্ড ফেলের ঘটনায় নতুন নিয়মকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল। মুশকিল আসানে পুরনো নিয়ম বহাল রাখার জন্য আবেদন জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪১
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পার্ট ওয়ানে রেকর্ড ফেলের ঘটনায় নতুন নিয়মকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল। মুশকিল আসানে পুরনো নিয়ম বহাল রাখার জন্য আবেদন জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

শিক্ষামন্ত্রী সোমবার বিধানসভায় জানান, নতুন নিয়ম যে চালু হয়েছে, সেই ব্যাপারে বহুল প্রচার হয়নি। পড়ুয়ারা বিষয়টি ভাল করে জানতেন না। সেই জন্যই পুরনো নিয়ম বহাল রাখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি এ দিন পড়ুয়াদের আরও এক বার মনে করিয়ে দেন, পড়াশোনায় মন দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী (এত ফেলের জন্য) উদ্বিগ্ন, আমরাও উদ্বিগ্ন। পড়ুয়াদের বলছি, পড়াশোনায় মন দিন।’’

ফেল-সমস্যা মেটাতে আজ, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
রেকর্ড সংখ্যক ফেল এবং পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। মন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘সাধারণ ধারণা, নিয়ম বদলানোয় এটা হয়েছে। অন্য কারণও আছে। সিন্ডিকেট ব্যবস্থা নেবে। তবে আমি অনুরোধ করছি, পুরনো নিয়মই থাক।’’ এখানে ‘অন্য কারণ’ বলতে শিক্ষামন্ত্রী পড়াশোনায় ছাত্রছাত্রীদের অমনোযোগের দিকে ইঙ্গিত করছেন বলেই মনে করছে শিক্ষা শিবির।

Advertisement

এ বার স্নাতক পার্ট-১ পরীক্ষায় কলা বিভাগে ৫৭.৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছেন। বিজ্ঞানে পাশের হার কমেছে ১০ শতাংশ। এ ভাবে পাশের হার কমে যাওয়ার জন্য নতুন নিয়মকে দুষছেন পড়ুয়ারা। এই প্রেক্ষিতেই পুরনো নিয়ম চালু রাখার আবেদন জানাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০০৯ সালের পুরনো নিয়ম অনুযায়ী অনার্সের কোনও পড়ুয়া জেনারেলের দু’টি বিষয়ের কোনওটিতেই পাশ না-করলেও তিনি পার্ট-২ পরীক্ষায় বসার যোগ্য বলে বিবেচিত হতেন। পরে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিয়ে ওই সব বিষয়ে পাশ করতে হত সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াকে। কিন্তু ২০১৬ সালের পরিবর্তিত নিয়মে অনার্সের পড়ুয়াকে বাধ্যতামূলক ভাবে জেনারেলের অন্তত একটি বিষয়ে পাশ করতেই হবে। একই ভাবে পুরনো নিয়মে জেনারেলের কোনও পড়ুয়া কোনও একটি বিষয়ে পাশ করলেই তিনি পরবর্তী পরীক্ষার জন্য যোগ্য বলে গণ্য হতেন। পরে সাপ্লিমেন্টারি দিয়ে পাশ করতে হত তাঁকেও। কিন্তু নতুন নিয়মে জেনারেলের পড়ুয়ার দু’টি বিষয়েই পাশ করা বাধ্যতামূলক। নতুন নিয়মে প্রথম পরীক্ষা হয় ২০১৭ সালে। তাতেই ফল-বিপর্যয়!

পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, নয়া নিয়মটা তাঁরা জানতেনই না। রেকর্ড ফেলের পরেই মারমুখী বিক্ষোভে নামেন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, পুরনো নিয়ম অনুযায়ী অকৃতকার্যদের পরবর্তী পরীক্ষার জন্য যোগ্য ঘোষণা করতে হবে। নতুন নিয়ম রূপায়ণের বিষয়টি পিছিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। কিন্তু শিক্ষা শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, পরিবর্তনের পরে নতুন যে-নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, সেটার রূপায়ণ স্থগিত রাখা যায় কী ভাবে?

ফেলের অভূতপূর্ব হার নিয়ে এ দিন বিধানসভায় সরব হয় বিরোধী শিবির। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘এমন কিছু মনে হবে না তো যে, আন্দোলন করলেই পাশ করানো হবে!? এটা কি শুধু চলতি বছরের জন্য নিয়ম, নাকি...। অনার্সে পাশ করলাম আর অন্য বিষয়ে ফেল করলাম, এ ভাবে তো চলতে পারে না।’’ বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ফেল করাদের পাশ করানোর দাবি তাঁরা তোলেননি। কিন্তু এই ব্যাপক সংখ্যক পড়ুয়ার ফেল করার অর্থ, গোটা সিস্টেম ফেল করেছে। ‘‘এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য স্ববিরোধী। এক দিকে তিনি মেনে নিচ্ছেন যে, পড়ুয়াদের অসুবিধা হয়েছে। অথচ তিনি তাঁদের আন্দোলনকে মান্যতা দিচ্ছেন না,’’ বলেন সুজনবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন