বিরোধীদের মোকাবিলায় কেন্দ্রকে পাল্টা তোপ পার্থর

বর্ধমান কাণ্ডে বিরোধীদের মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে কেন্দ্রকে পাল্টা তোপ দেগে মুখরক্ষার পথ খুঁজছে শাসক দল। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে জঙ্গি মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে শাসক দলের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে রোজই আক্রমণের সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। লাগাতার এই আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শনিবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১১
Share:

বর্ধমান কাণ্ডে বিরোধীদের মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে কেন্দ্রকে পাল্টা তোপ দেগে মুখরক্ষার পথ খুঁজছে শাসক দল। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে জঙ্গি মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে শাসক দলের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে রোজই আক্রমণের সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। লাগাতার এই আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শনিবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন।

Advertisement

পার্থবাবুর অভিযোগ, “বর্ধমানের ঘটনার পর রাজ্য সরকার যথাসময়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। বেশ কয়েক দিন চুপ করে থাকার পরে কেন্দ্রীয় সরকার আসরে নেমেছে। নিজেদের সংস্থার ব্যর্থতা ঢাকতে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তারা এ কাজ করেছে।” যে এনআইএ-র তদন্ত তৃণমূল সরকারের না-পসন্দ, তাদের নাম না করে পার্থবাবুর তির্যক মন্তব্য, “রাজ্যে উৎসবের সময়ে কেন্দ্রের যে সংস্থাগুলির সতর্ক থাকা উচিত ছিল, তারা তা ছিল কি?” রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মোকাবিলার জন্য অনুপ্রবেশ হাতিয়ারে শান দিচ্ছে বিজেপি। বর্ধমান কাণ্ডের পরে এ রাজ্যে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে রাজ্য সরকারকে দুষেছে অন্য বিরোধী দলগুলিও। এ দিন পার্থবাবু পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “সীমান্তরক্ষার দায়িত্ব কে পালন করে? কেন্দ্রীয় সরকারের পাহারাদারদের ভূমিকা কি? তাদের গাফিলতি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি। কেন্দ্রকে উত্তর দিতে হবে।”

পার্থবাবুর সমালোচনার জবাবে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, এনডিএ জমানায় সীমান্ত এলাকায় যে তারকাঁটার বেড়া দেওয়া হয়েছিল, ইউপিএ জমানায় সেগুলির সংস্কার হয়নি। ফলে সেগুলি অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার দায় নিতে হবে তৃণমূলকেও। কারণ তারা ইউপিএ সরকারের শরিক ছিল। কেন্দ্রীয় সংস্থার ব্যর্থতার অভিযোগ প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “আসলে কোনও কোনও রাজ্যে নির্বাচন আছে বলেই কেন্দ্র অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে।” তৃণমূল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলতেই বিজেপি এখানে এনআইএকে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছে। রাহুলবাবু অবশ্য বলেন, “এনআইএ জঙ্গি খুঁজবে। তাতে রাজ্যের লাভ। তা হলে রাজ্য সরকার এই তদন্তে অখুশি হচ্ছে কেন? আসলে তৃণমূল তাদের ঘনিষ্ঠ উগ্রপন্থীদের আশ্বস্ত করার জন্য বোঝাতে চাইছে যে, অন্য রাজ্যে বিধানসভা ভোট মিটে গেলে এনআইএ তদন্ত আর হবে না। ফলে তাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।”

Advertisement

এ দিন পার্থবাবু বিজেপি-র সঙ্গে কংগ্রেস এবং বামেদের এক বন্ধনীতে রেখেই সমালোচনা করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র অবশ্য তৃণমূলের সরকারকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ আখ্যা দিয়ে এ দিন অভিযোগ করেন, “যে কংগ্রেস নেতা বা কর্মী রাজ্য সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, তাদেরই মিথ্যা মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করছে।” বর্ধমান-কাণ্ডের বিরুদ্ধে আজ, রবিবার কলকাতা-সহ প্রতিটি জেলায় মিছিল করবে বামফ্রন্ট। কাল, সোমবার সিটু, মহিলা সমিতি, ছাত্র-যুবদের সংগঠন সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিল করবে। এ দিন সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের দেশ, প্রতিবেশী বাংলাদেশ-সহ সর্বত্র যখন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নির্মূল করার প্রচেষ্টা চলছে, তখন তৃণমূল এ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে উস্কানি দিচ্ছে।” একই ভাবে এ দিনই এক বিবৃতিতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “রাজ্যে হিন্দু মৌলবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি মুসলিম মৌলবাদী শক্তিও তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে নিজেদের সংহত করছে।” সংখ্যালঘুদের সমর্থন পাওয়ার জন্য তৃণমূল নরম সাম্প্রদায়িক লাইন নিয়ে চলছে বলে অভিযোগ তুলে বিমানবাবুর বক্তব্য, “তৃণমূল উভয় সম্প্রদায়ের ঐক্য বিরোধী নানা প্ররোচনামূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ধমান কাণ্ড ঘিরে তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে পরিস্থিতির ফায়দা নেওয়ার এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন