পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
একটি শিক্ষাবর্ষ পার হয়ে গেল। শেষ হল পঞ্চায়েত নির্বাচনের অন্তিম পর্বও। স্নাতক স্তরে ভর্তি শেষ হয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ক্লাস। কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্বাচন আর হল না!
এই অবস্থায় অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল সোনার পাথরবাটি হয়েই থেকে যাবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়া শিবিরে। এর মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাত্রভোট নিয়ে ফের মুখ খোলায় আশার আলো দেখছেন ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষামন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চাইবেন, সেখানে ভোটের পরিস্থিতি আছে কি না। ইঙ্গিত দিয়েছেন ঘোষিত বিধিতে কিছু পরিবর্তনেরও।
শেষ বার ছাত্রভোট হয়েছিল ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষে। তার পরে ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষে নির্বাচন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ২০১৮-’১৯ শিক্ষাবর্ষে ভোট হবে কি না, সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছে শিক্ষা শিবির। রাজনৈতিক ছাত্র সংসদের বদলে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই বেশ কয়েক মাস আগে নির্বাচনী বিধি প্রকাশ করা হয়। সেই বিধিতে কিছু পরিবর্তনের দাবি তুলেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। বিধিতে ছাত্র কাউন্সিলের তহবিলের দায়িত্বে এক জন শিক্ষককে রাখা হয়েছে। তাতেই আপত্তি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের। এক ছাত্র সংগঠনের দাবি, শিক্ষকের পাশাপাশি ওই পদে এক ছাত্র-প্রতিনিধিকেও রাখা হোক। সহকারী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে এক জন পড়ুয়াকে রাখার দাবি তুলেছে তারা।
শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, বিভিন্ন কলেজে একই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে গোষ্ঠী-বিবাদের বড় কারণ অর্থ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেন্ট জেভিয়ার্স মডেল অনুসরণ করার কথা বলেছিলেন। কী সেই মডেল? মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গভর্নিং বডি যদি প্রতি বছর ছাত্র-প্রতিনিধিদের রেখে বোর্ড গড়ে দেয়, তা হলে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু তার পরে বিধি তৈরি হয়ে গেলেও গত শিক্ষাবর্ষে কোনও ছাত্রভোট হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘ছাত্রভোট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর নেব। এখন ভোট হবে কি না...। হলে কী ভাবে হবে? ছাত্র সংগঠনগুলি একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে। নিয়ম তৈরির সময় সেগুলো মাথায় রাখব।’’
সরকার অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের কথা বললেও নির্বাচিত ছাত্র সংসদের দাবিতেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁরা অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের বিরুদ্ধে। ছাত্রভোটের পুরনো ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা। এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি সেই গণতন্ত্রে বারবার আঘাত করছে বলে সৃজনের অভিযোগ। ‘‘রাজ্য সরকার তাদের ছাত্র শাখাকে নিয়ন্ত্রণ করতে
পারেনি বা চায়নি। তার বদলে পুরো নির্বাচন তুলে দেওয়া অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। আমরা এর বিরোধিতা করেছি এবং করবো,’’ বলেন সৃজন। টিএমসিপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার যেটাই করবে, তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমাদের।’’